Contact

অর্গাননের ভিত্তিতে রিয়েল হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগে নয়া প্রস্তাবণা, কাজী আজম
17 Jun, 2024

অর্গাননের ভিত্তিতে রিয়েল হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগে নয়া প্রস্তাবণা, কাজী আজম

তথ্য সূত্র :

১. অর্গানন অব মেডিসিন ষষ্ঠ সংস্করণ।

২. কেন্ট ফিলোসোফি।

৩. এইচ. এ রবার্টস ফিলোসোফি।

৪. স্যার শ্যামল কুমার দাসের ফিলোসোফি ও প্রয়োগ অভিজ্ঞতা।

৫. ডাঃ বিজয় কুমার বসুর প্রয়োগ অভিজ্ঞতা।

৬. ডাঃ হরিমোহন চৌধুরীর প্রয়োগ অভিজ্ঞতা।

ভুমিকা :

স্যার হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক, অর্গানন অব মেডিসিন তাঁর লেখা হোমিওপ্যাথির সংবিধান। ষষ্ঠ সংস্করণ সম্পর্কে তাঁর অভিমত হচ্ছে- এটি পূর্ণাঙ্গতার কাছাকাছি এবং সেখানে বর্ণিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুত ও প্রয়োগের নবতর পদ্ধতিকে তিনি পূর্ণাঙ্গ মেথড হিসাবে দাবী করেছেন! যদি তিনি বেচে থাকতেন হয়তো অর্গাননের আরও সংস্কার হত; কিন্তু আমার সীমিত জানা-শোনায় তাঁর মতো পূর্ববর্তি প্রায় পাঁচ হাজার বছরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান ধারণ করে এত গভীরে, এত যত্নশীল, এত নিখুঁত হোমিওপ্যাথিক গবেষক আর নেই। সুতরাং যা অর্গানন সম্মত নয় তা হোমিওপ্যাথি নয়; যা হোমিওপ্যাথি নয় তা রিয়েল হোমিওপ্যাথিও হতে পারে না, কেননা আমরা মনে করি অর্গাননের বিধি-বিধান যথাযথ অনুসরণ করে চিকিৎসা বা চর্চাকে আসল বা প্রকৃত বা রিয়েল দাবী করা যেতে পারে। আবার আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে অস্বীকার করে গতানুগতিক চিন্তাকে প্রাধান্য দেয়ার সুযোগ নেই। সেই দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা আমাদের শিক্ষাগুরু শ্রদ্ধেয় শ্যামল কুমার দাস উদ্ভাবিত “রিয়েল হোমিওপ্যাথি”কে মূল্যায়ন ও চর্চার ক্ষেত্র সহজ সরল করতে এই প্রচেষ্টা গ্রহন করেছি। একাজে আমরা আবেগ বর্জন করেছি এবং বিবেক ও বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়েছি, কেননা বিজ্ঞান অনুশীলণে আবেগের স্থান নেই! আবার একথাও স্মরণে রাখতে হবে হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক আইনের উপর প্রতিষ্ঠিত দর্শন আশ্রিত বিজ্ঞান, যার সবটুকুই আধুনিক ল্যাবরেটরীতে প্রমানসিদ্ধ না হলেও মানবদেহকে ল্যাবরেটরী মানলে তা অহরহ সত্য হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। অর্গানন গ্রন্থে প্রতিটি সূত্র বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হলেও উদ্বৃতি হিসাবে আমরা চৌম্বক অংশ ও অন্যান্য উদ্বৃতি সমূহ আমাদের বোধগম্য ভাষায় নিচে উল্লেখ করেছি যা আমদেরকে মূল নির্দেশনা বুঝতে সাহায্য করবে।

দর্শন :

অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থে স্যার হ্যানিম্যান ১ নম্বর সূত্রে নির্দেশ দিয়েছেন, অসুস্থ থেকে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যত্র বলেছেন, কোন রোগ নেই কিন্তু মানুষেরা অসুস্থ! 

স্যার কেন্ট বলেছেন, রোগের পরিনামফলের চিকিৎসাকে ব্রত করা যাবে না বরং অসুস্থতার চিকিৎসা করতে হবে!

স্যার এইচ. এ রবার্টস বলেছেন, হোমিওপ্যাথি অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করে।

স্যার শ্যামল কুমার দাস বলেছেন, অসুস্থ মানুষের প্যাথলজি থাকে না বরং তাঁর জীবন দর্শন থেকে অসুস্থতা চিহ্নিত করতে হবে।

অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থে স্যার হ্যানিম্যান ৪ নম্বর সূত্রে নির্দেশ দিয়েছেন, রোগ উৎপাদনকারী অবস্থা সমুদয়কে অপসারণ করার উপায় যিনি জানেন এবং বিকৃত স্বাস্থ্য থেকে মানুষকে সুস্থ করতে পারেন তিনিই প্রকৃত স্বাস্থ্য-রক্ষক হিসাবে গণ্য হবেন।

৬, ৭ ও ৮ নম্বর সূত্রে বলেছেন, লক্ষণ সমষ্টি থেকে রোগের প্রকৃতি উপলব্ধি করা যায়; লক্ষণ সমষ্টি অনুসন্ধানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মায়াজমের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা; লক্ষণ সমষ্টি অপসারিত না হলে মূল ব্যাধি দূর হয় না তথা স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলা যাবে না। স্যার কেন্ট এই মায়াজমকেই ট্রু-ডিজিজ বলেছেন।

অর্গাননে আরও বলা হয়েছে, পাদটিকা ১- লক্ষণ সৃষ্টির কারণ রোগ শক্তি তথা প্রকৃত ব্যাধি মায়াজমকে নির্মূল করতে সহজবোধ্য চিকিৎসা নীতি অসুসরণ করা চিকিৎসকের কর্তব্য, পাদটিকা ২- জীবনী শক্তির অভ্যন্তরীণ অবস্থা বুঝতে লক্ষণসমূদয় জানা দরকার কিন্তু দেখিবার প্রয়োজন নেই, পাদটিকা ৩- লক্ষণ দূর করতে উপশমদায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি বর্জন করতে হবে তবে আরোগ্যর বাধা স্বরূপ বাহ্যিক কারণসমূদয় অপসারণ পূর্বক রোগীকে আরাম দেওয়ার চেষ্টা করা জরুরী বিবেচনা করতে হবে, পাদটিকা ৪- রোগীকে উপশম দেবার নামে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা মূলত রোগ চাপা দেয় এবং তা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।

১০, ১১ ও ১২ নম্বর সূত্রে বলেছেন, জীবনী শক্তি ব্যতীত দেহযন্ত্র জড়, সকল প্রকার অনুভুতি ও কার্যকারিতা জীবনী শক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাই বলা যায় সুস্থ এবং অসুস্থ- উভয় অবস্থায় জীবনী শক্তি সক্রিয় থাকে। জীবন-বিরোধী রোগজনক রূপান্তর সাধক পদার্থের অদৃশ্য গতিশীল প্রভাব হচ্ছে রোগ শক্তি। এই রোগ শক্তিই জীবনী শক্তির কার্যকর প্রকাশকে বাঁধা সৃষ্টি করে ফলে জৈবনিক মূলনীতি অস্বাভাবিকভাবে বিকৃত হয়ে শরীর-যন্ত্রে কষ্টকর লক্ষণাবলী উৎপাদিত হয়। জীবনী শক্তি রোগ শক্তি দ্বারা অক্রান্ত হয়ে শরীর অভ্যন্তরে কিরূপ রুগ্নাবস্থা সৃষ্টি করেছে তা রোগ লক্ষণাবলীর বাহ্যিক প্রকাশের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে হয়।

১৬ নম্বর সূত্রে বলেছেন, শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিকল্প শক্তি হিসাবে জীবনী শক্তির উপর ক্রিয়া করতে সক্ষম হয় এবং আরোগ্য সম্পাদন সম্ভব হয়।

পাদটিকা ৯ এ বলা হয়েছে, জীবনী শক্তির প্রভাব অত্যন্ত বিপর্যস্ত হলে সাংঘাতিক ব্যাধির সৃষ্টি হতে পারে এবং অনুরূপভাবেই তা নিরাময় হতে পারে। অর্থাৎ যে কারণে জীবনী শক্তির প্রভাবে বিপর্যয় ঘটেছে তদ্রুপ হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সাহায্যে কৃত্রিম কারণ ঘটিয়েই জীবনী শক্তিকে বিপর্যয় মুক্ত করতে হবে। 

২১ নম্বর সূত্রে বলেছেন, সুস্থ মানব দেহে যে ওষুধ যে লক্ষণ তৈরী করতে পারে, অসুস্থ মানবদেহের সেই লক্ষণ সেই ওষুধ অপসারণ করতেও পারে (similia similibus curentar)।

অন্যত্র বলা হয়েছে, পাদটিকা ১৩- হোমিওপ্যাথিক নীতি বর্জিত অভিজ্ঞতা তা যদি পঞ্চাশ বছরের অধিকও হয় হোমিওপ্যাথিতে তা মূল্যহীন। পাদটিকা ১৪- হোমিওপ্যাথিতে প্রাকৃতিক রোগের চেয়ে সদৃশ বিধানের বলবত্তর শক্তিকৃত ওষুধ প্রয়োগের নীতি শারীরিক ও মানসিক উভয় রোগসমূহকে আরোগ্য করার ক্ষমতা রাখে।

৩ নম্বর সূত্রে বলেছেন, রোগে অর্থাৎ প্রত্যেকটি রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসককে পরিষ্কারভাবে চারটি বিষয় বুঝতে হবে- ১) কি আরোগ্য করতে হবে, ২) ওষুধের আরোগ্যকারী শক্তি কি, ৩) মূলনীতি অনুযায়ী ওষুধের আরোগ্যকারী শক্তিকে কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং ৪) আরোগ্যের বাধাগুলি কিভাবে দূর করে স্থায়ীভাবে আরোগ্য করতে হবে।

৭২ নম্বর সূত্রে বলেছেন, মানবজাতি যত প্রকার রোগে আক্রান্ত হয় তা মূলত অস্বাভাবিকভাবে জীবনী শক্তির দ্রুত অসুস্থতাব্যঞ্জক প্রক্রিয়া মাত্র। দুই প্রকারে এই রোগাক্রান্তের ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। যথা- ১. অচির-রোগ (acute diseases), যা তীব্রভাবে দ্রুতগতিতে নিজ নিজ ভোগকাল শেষ করে বিলুপ্ত হয়ে যায়; ২. চির-রোগ (chronic diseases), জীবনী শক্তির প্রতিরোধ সত্ত্বেও তা ধ্বংস সাধনে সক্ষম হয় না এবং উপযুক্ত চিকিৎসা ছাড়া মৃত্যু অবধি থেকে যায়। কোন একটি মায়াজমের গতিশীল সংক্রমণ (dynamic infection) থেকে চির রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

৮২ নম্বর সূত্রে বলেছেন, চির-রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীর সর্বপ্রকার রোগের প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই চিকিৎসার জন্য ওষুধ নির্বাচন করতে হলে বিশেষভাবে ব্যক্তিগত বিশেষত্ব (personality) নির্ণয় করতে হবে, নতুবা আরোগ্য অসম্ভব। এই personality নির্ণয় করতে নিরূপনীয় লক্ষণাবলী ও চরিত্রগত বিশেষত্বসমূহ যত্ন সহকারে সংগ্রহ করতে হবে।

৯৫ নম্বর সূত্রে বলেছেন, দীর্ঘদিনের আনুসঙ্গিক চরিত্রগত লক্ষণসমূহ যা রোগী নিজের স্বভাবের সুস্থ-স্বাভাবিক বিষয় মনে করে থাকেন অথচ রোগের সাথে তার যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে তা চিকিৎসককে গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা করতে হবে কেননা ওষুধ নির্বাচনের জন্য এটি প্রায় অত্যন্ত আবশ্যকীয়।

স্যার কেন্ট বলেছেন, পিছনে ফিরে গিয়ে তখনকার লক্ষণ সংগ্রহ পূর্বক সেই লক্ষণের ভিত্তিতে ঔষধ নির্বাচন করতে হবে!

স্যার এইচ. এ রবার্টস বলেছেন, শৈশবের চারিত্রিক লক্ষণের মধ্যে সিমিলিমাম খুঁজে পাওয়া সম্ভব!

স্যার শ্যামল কুমার দাস বলেছেন, ব্যক্তির জীবন দর্শন বিশেষতঃ শৈশবের জীবন দর্শন ঔষধ নির্বাচনে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ!

অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থে স্যার হ্যানিম্যান ১৪৮ নম্বর সূত্রে উল্লেখ করেছেন, কোন প্রাকৃতিক রোগই মানবদেহের ভিতরে বা বাহিরে অবস্থিত কোন ক্ষতিকর বস্তু (noxious material) হতে উপন্ন হয় না, বরং রোগ হচ্ছে অশরীরী (spirit-like), ধারণা প্রসূত (conceptual) শক্তি দ্বারা সৃষ্ট যা সংক্রমণের মতোই শরীরের অভ্যন্তরে অবস্থিত প্রাণধর্মের স্বভাবজাত অস্তিত্বকে (instinctive existence) উৎপীড়িত করে কতিপয় রোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বাধ্য করে এবং লক্ষণসমষ্টি উৎপন্ন করে। ফলে স্বাভাবিক জীবন-প্রবাহ ব্যাহত হয়।

৮১ নম্বর সূত্রে বলা হয়েছে, রোগসমূহ শত শত বংশপরম্পরায় লক্ষ লক্ষ মানবদেহে সংক্রমিত হয়ে চলেছে।

প্রাণধর্মের স্বভাবজাত অস্তিত্ব (instinctive existence) এই কথাটির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কথা স্যার কেন্ট বলেছেন, মানুষটি সেই রোগে ভুগছেন যা তাঁর জন্মের সময় ছিল। স্যার শ্যামল কুমার দাস এই বিষয়টিকেই জেনেটিক্স বলেছেন অর্থাৎ জন্মের সময় জেনেটিক্সের মাধ্যমে আমরা পূর্বপুরুষের রোগ বালাই পেয়ে থাকি।

২০৪ নম্বর সূত্রে বলা হয়েছে, যে সকল চির-রোগ বহুদিন যাবৎ অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাত্রা হতে সৃষ্ট এবং যে অসংখ্য অ্যালোপ্যাথিক ওষুধজাত রোগ উৎপন্ন হয় তা ছাড়া অবশিষ্ট চির-রোগ অধিকাংশই তিনটি মায়াজম হতে উৎপন্ন হয়ে থাকে; সেগুলি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সিফিলিস যার প্রাথমিক লক্ষণ উপদংশের ক্ষত বা বাগী, অভ্যন্তরীণ সাইকোসিস যার প্রাথমিক লক্ষণ আঁচিল এবং অভ্যন্তরীণ সোরা যার প্রাথমিক লক্ষণ খোস পাঁচড়া। এদের সংক্রমণের ফলে স্থানীয় লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই সমগ্র শরীরযন্ত্রকে এরা আয়ত্বে আনে অতঃপর যখন বাহিরে প্রকাশিত তখন এগুলির বিকাশ বন্ধ থাকে। শরীরের বহির্ভাগে প্রকাশিত এসব প্রাথমিক লক্ষণগুলির অযৌক্তিক-অপ চিকিৎসায় অপসারণের ফলে সেগুলির পুনঃবিকাশ শুরু হয় এবং শক্তিশালী প্রকৃতি অবিলম্বে অথবা বিলম্বে অসংখ্য নামহীন যন্ত্রণাময় চির-রোগ বিস্তার লাভ করে শত সহস্র বছর হতে মানবজাতিকে মহামারীগ্রস্ত করে ফেলেছে।

স্যার হ্যানিম্যান এই অনুচ্ছেদে চির-রোগ সৃষ্টির একটি পরিনাম সহ ছয়টি উৎসের কথা উল্লেখ করেছেন। পরিনামটি হচ্ছে- সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস এর প্রাইমারী সিম্পটম সোরার খোস-পাঁচড়া, উপদংশের ক্ষত বা বাগী এবং প্রমেহর আঁচিল এর অপ চিকিৎসায় সৃষ্ট হয়ে পরবর্তিতে জেনেটিক্সের মধ্য দিয়ে সহস্র বছর ধরে মানবজাতিকে নামহীন অসংখ্য যন্ত্রণাময় চির-রোগ বিস্তার করে চলেছে বলে তিনি দাবী করেছেন। তন্মধ্যে এই অনুচ্ছেদে তিনটি উৎসের নাম বর্ণিত হয়েছে যথা- সিফিলিস, সাইকোসিস এবং সোরা যদিও এদের মধ্যে সোরা অগ্রগণ্য। এই তিনটি উৎসের প্রাথমিক লক্ষণের অপ চিকিৎসায় নবতর আর যে উৎসটি সৃষ্টি হয়েছে পরবর্তিতে স্যার বার্নেট ও হেনরী ক্লে অ্যালেন তার নাম দিয়েছেন টিউবারকুলার ডায়াথেসিস; অবশ্য স্যার হ্যানিম্যান একে সিউডো-সোরা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, পক্ষান্তরে স্যার স্টুয়ার্ট ক্লোজ দাবী করেছেন হ্যানিম্যানের সোরা এবং টিউবাকল ব্যাসিলাস সমার্থক। এই উৎসগুলিকে স্যার হ্যানিম্যান মায়াজম হিসাবে অভিহিত করেছেন, স্যার কেন্ট সকল মায়াজমকে ট্রু-ডিজিজ বলেছেন। 

স্যার শ্যামল কুমার দাসের অভিমত আদিম যুগে বহুকাল অস্বাস্থ্যকর বা প্রতিক‚ল জীবন-সংগ্রামে বন-জঙ্গলের পশু-পাখির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে গিয়ে মানবজাতি আর একটি রোগের উৎস পোষ্ট রেবিস সিনোড্রাম-পিআরএস এবং পূর্বোক্ত জীবন-যাত্রার নানান প্রতিক‚লতা সহ অযৌক্তিক চিকিৎসায় অন্য আর একটি রোগের উৎস পোষ্ট ট্রমা সিন্ড্রোম-পিটিএস লাভ করেছে। সুতরাং রিয়েল হোমিওপ্যাথি মতে পূর্বোক্ত চারটি সহ ছয়টি ট্রু-ডিজিজ জেনেটিক্সের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্মে রোগ-বালাই বয়ে নিয়ে চলেছে। তিনি আরও বলেছেন, ট্রু-ডিজিজগুলির প্রতিনিধিত্বকারী ছয়সেট হার্মফুল জিন প্রতিটি মানুষের মধ্যেই ইন-একটিভ, একটিভ অথবা ওভার একটিভ স্টেটে থাকে; যদি ইন-একটিভ থাকে তবে ঐ ট্রু-ডিজিজের স্বভাবগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে জীবন দর্শন এবং প্যাথজেনিক লক্ষণ প্রকাশ পায় না, একটিভ থাকলে স্বভাবগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে জীবন দর্শন পরিলক্ষিত হয় কিন্তু প্যাথজেনিক লক্ষণ প্রকাশ পায় না, ওভার একটিভ অবস্থায় প্যাথজেনিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে ঔষধ নির্বাচনে ট্রু-ডিজিজের একটিভ স্টেটে যে জীবন দর্শন পাওয়া যায় সেটির সদৃশ ঔষধ হচ্ছে ঐ মানুষের সিমিলিমাম। তবে সামগ্রীক অসুস্থতা থেকে নিরাময়ের জন্য আরোগ্যের বাধা দূর করতে অন্যান্য ট্রু-ডিজিজের সদৃশ ঔষধও যথাযথ নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে। 

এ পর্যন্ত উদ্বৃতি ও আলোচনার সার হচ্ছে-

১. হোমিওপ্যাথি অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করে;

২. অসুস্থ হচ্ছেন এমন মানুষ যার প্যাথজেনিক লক্ষণ নেই, যদিও সাধারণত রোগ-বালাই নিয়ে পরিত্রানের আশায় মানুষেরা একজন হোমিওপ্যাথের নিকট চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসেন;

৩. চির-রোগের উৎস হচ্ছে মায়াজম, স্যার কেন্ট যাকে ট্রু-ডিজিজ আখ্যা দিয়েছেন এবং এটি বংশগতি বা জেনেটিক্সের মাধ্যমে শত-সহস্র প্রজন্মে প্রবাহিত হয়ে চলেছে;

৪. স্যার শ্যামল কুমার দাস পর্যন্ত উদ্ভাবিত ট্রু-ডিজিজের ছয়টি উৎস অর্গাননের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তবে জীবন যাত্রা থেকে আরও ট্রু-ডিজিজ সৃষ্টির তথ্য অনাবিষ্কৃত থাকতে পারে;

৫. জেনেটিক্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত ট্রু-ডিজিজগুলির উপস্থিতির কারণেই সকল মানুষকে অসুস্থ বলা হয়েছে কেননা যেকোন সময়ে মানুষটি রোগগ্রস্ত হতে পারে; 

৬. সেই অসুস্থতার লক্ষণ সদৃশ ঔষধ প্রয়োগ করলে মানুষটি সুস্থ হবেন;

৭. আপাত সুস্থাবস্থার স্বভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তথা জীবন দর্শনের লক্ষণ সদৃশ ঔষধ হচ্ছে ঐ মানুষটির নিরাময়কারী ঔষধ হিসাবে গণ্য হবে;

৮. আরোগ্যের বাধা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে প্রকৃত নিরাময় নিশ্চিত হবে না সুতরাং জেনেটিক্স থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য ট্রু-ডিজিজের জেনেটিক মেটেরিয়ালকে বাধা হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত;

৯. রোগগ্রস্ত অবস্থা দুই প্রকার- একিউট ও ক্রনিক ডিজিজ; একিউট ডিজিজের ক্ষেত্রে সাময়িক উপশম সমর্থনযোগ্য কিন্তু ক্রনিক ডিজিজের ক্ষেত্রে উপশমকে কখনই সমর্থন করা যায় না কেননা এতে সাপ্রেজড বা দমন করা হয় যার পরিনতি ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে।

এ পর্যন্ত দর্শনগত যে সিদ্ধান্তসমূহ জানা গেল তা অর্গানন এবং স্যার শ্যামল কুমার দাস উদ্ভাবিত “রিয়েল হোমিওপ্যাথি”র সাথে পরিপূর্ণ সঙ্গতি রয়েছে। বরং বলা চলে অর্গাননের যে নির্দেশণা আমাদের অনেক হোমিওপ্যাথিক বন্ধুরা বুঝতে জটিলতার সম্মুখিন হয়েছেন তা যথেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ও সহজ-সরলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। অর্গাননে বর্ণিত এই নির্দেশণাগুলিই মৌলিক নির্দেশণা এবং এর ভিত্তিতে যে চর্চা হয় তাকেই “রিয়েল হোমিওপ্যাথি” বলা সঙ্গত হবে।

অর্গাননের পাদটিকা ১০৮ এ স্যার হ্যানিম্যান আহবান জানিয়েছেন- প্রত্যেকটি রোগের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ভাজা পায়রার ন্যায় সহজে মুখে এসে পৌঁছাবে না, এটি নির্বাচন করা শ্রমসাধ্য, ক্ষেত্র বিশেষ বহুল শ্রমসাধ্য ব্যাপার। এটিকে সহজসাধ্য করতে বর্তমানের চমৎকার গ্রন্থরাজী থাকা সত্বেও যথেষ্ট সতর্কতা ও গভীর মননশীলতার সাথে এর মূল উৎসসমূহের আরও গবেষণা করা একান্ত প্রয়োজন। গৌরবময় হোমিওপ্যাথিক নামধারী ভদ্রলোকেরা (mongral sact) আকারে-বিকারে সহসা উপশম দেওয়ার জন্য যেন-তেন উপায়ে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচন এবং প্রয়োগ করে সফলতা কিংবা ব্যর্থতা যাই হোক সেটি হোমিওপ্যাথি নয়।

এই আহবানে সাড়া দিয়ে স্যার শ্যামল কুমার দাস ব্যক্তির জীবন দর্শন উদ্ভাবন এবং একে মূল্যায়ন করে আটটি সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করেছেন যা ছয়টি ট্রু-ডিজিজকে ইন-একটিভ করতে ভুমিকা রাখে। তিনি সোরার জন্য সোরিনাম, সিফিলিসের জন্য সিফিলিনাম, সাইকোসিসের জন্য থুজা ও মেডোরিনাম, পিটিএসের জন্য কার্বো ভেজ ও কার্বো এনিমিলিস, পিআরএসের জন্য হাইড্রোফোবিনাম এবং টিউবারকুলার ডায়াথেসিসের জন্য ড্রসেরাকে মনোনীত করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি টিউবারকুলিনাম এবং ব্যসিলিনামকেও মনোনীত করেছিলেন কিন্তু পরবর্তিতে তা বাতিল করেছেন, এ ব্যাপারে তিনি ঔষধ দুটিকে “অপ্রয়োজনীয়” উল্লেখ করা ছাড়া কোন বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন নাই। চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্যার শ্যামল কুমার দাস মনোনীত এই ঔষধগুলি জীবন দর্শনের ভিত্তিতে প্রয়োগ করায় অনন্য অবদান রেখে চলেছে যা ব্যবহারকারী সকল চিকিৎসকগণই অবহিত আছেন। ১০৮ পাদটিকা অনুযায়ী এহেন প্রচেষ্টাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো প্রত্যেক হোমিওপ্যাথিক অনুরাগীর কর্তব্য; আমরাও চিকিৎসা ক্ষেত্রে একে গুরুত্বের সাথে নিয়েছি এবং এর সুফল উপভোগ করছি।

প্রয়োগ :

একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের একমাত্র ও মহৎ লক্ষ্য হচ্ছে অসুস্থতা থেকে হারানো সুস্থাবস্থা ফিরিয়ে আনা। সুতরাং সুস্থাবস্থা এবং আরোগ্যর চুড়ান্ত আদর্শ সম্পর্কে স্যার হ্যানিম্যানের নির্দেশণা অনুধাবন করা জরুরী।

অর্গাননের ৯ নম্বর সূত্রে বলা হয়েছে, সুস্থাবস্থায় স্বয়ংচালিত অশরীরী জীবনী শক্তি তার অসীম প্রভাবে দেহযন্ত্রকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ ও বাঁচিয়ে রাখে। সুস্থাবস্থার দু’টি শর্ত, যথা- ১. দেহযন্ত্রে কষ্টকর কোন প্যাথলজি থাকে না এবং ২. অনুসন্ধিৎসু, যুক্তিবাদী মানুষ জীবন্ত শরীরযন্ত্রকে মানবজীবনের মহত্তর উদ্দেশ্য-সাধনে স্বাধীনভাবে নিযুক্ত করতে সক্ষম হয়।

২ নম্বর সূত্রে বলা হয়েছে, হারানো স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে হবে- দ্রুত, স্বচ্ছন্দে, নির্ভরযোগ্য ও নির্দোশ উপায়ে এবং স্থায়ীভাবে।

আবার উপশমের নামে দমনমূলক চিকিৎসার পরিনতি এবং যথাযথ চিকিৎসার সুফল সম্পর্কে-

পাদটিকা ১২১ এ বলা হয়েছে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার নামে দমনমূলক (Suppression) চিকিৎসায় স্বাস্থ্য পুনরায় যদি ফিরে আসে তবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ঐ সকল ব্যক্তির চিন্তা-কর্ম-আচরণে বিকৃতি (perversions) দেখা দেয়।

পাদটিকা ১২৩ এ বলা হয়েছে, বহুদিনের পুরাতন মানসিক ও আবেগপ্রবণ রোগসমূহ স্বতঃস্ফুর্তভাবে কদাচিৎ আরোগ্যলাভ করে কারণ, অভ্যন্তরীণ রোগপ্রবণতা নিজেকে আবার স্থুল দেহে প্রেরণ করে। তবে অল্পদিনের মধ্যেই আবার সেই রোগ ফিরে আসে। অথচ প্রকৃত আরোগ্যকলা, অকৃত্রিম ও বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এরকমের হতভাগ্য অসংখ্য রোগীরা মানসিক-দৈহিক স্বাস্থ্য ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

২৪৬ নম্বর সূত্রে দাবী করা হয়েছে, ঔষধের ক্রিয়া কাল বিবেচনায় যে প্রয়োগ পদ্ধতি রয়েছে তাতে ৪০, ৫০ কিংবা ১০০ দিন পর্যন্ত চলতে পারে কিন্তু নবতর পদ্ধতির (পঞ্চাশ সহস্রতমিক) ঔষধ প্রয়োগ করলে আরোগ্যের জন্য এই সময়কে অর্ধেক, এক চতুর্থাংশ বা তা অপেক্ষাও কম করা সম্ভব যা চিকিৎসক এবং রোগী উভয়ের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

স্যার শ্যামল কুমার দাস রিয়েল হোমিওপ্যাথি চর্চায় অর্গাননের ৫ম সংস্করণের শততমিক এবং ৬ষ্ঠ সংস্করণের পঞ্চাশ সহস্রতমিক উভয় ঔষধ সম্মিলিত একটি নিয়মে প্রয়োগের নির্দেশণা দিয়েছেন। প্রতিটি ঔষধ প্রথম প্রয়োগের সময় শততমিকের সিএম পটেন্সি ব্যবহারকে নির্দিষ্ট করেছেন। সিএম প্রয়োগে যদি ইমিডিয়েট এগ্রাভেশন হয় তবে শততমিক ২০০ শক্তি প্রয়োগে তা নিউট্রিলাইজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ট্রু-ডিজিজের প্রভাব অনুযায়ী ছয়টি সাইকেলে ঔষধগুলি একটি নীতির ভিত্তিতে প্রয়োগের কথা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে প্রথম সাইকেলে হাইড্রোফোবিনাম সিএম প্রয়োগপূর্বক চিকিৎসা শুরুর নির্দেশণা দিয়েছেন। দ্বিতীয় সাইকেলে অপরিবর্তনীয় জীবন দর্শন অথবা তৃতীয় সাইকেলে পরিবর্তনীয় জীবন দর্শন ভিত্তিক ঔষধ প্রয়োগ করতে বলেছেন। চতুর্থ সাইকেলে কার্বো ভেজ ও কার্বো এনিমিলিস, পঞ্চম সাইকেলে ড্রসেরা ও সিফিলিনাম (ব্যক্তির বর্তমান বা অতীত জীবনে যক্ষার ইতিহাস থাকলে ড্রসেরা প্রয়োগ নিষিদ্ধ) এবং ষষ্ঠ সাইকেলে থুজা ও মেডোরিনাম প্রয়োগ করতে হবে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। কোন সাইকেলে যখন নির্বাচিত ঔষধ কাজ করবে না তখন সোরিনাম দিয়ে ক্যাটালাইজ করতে হবে। প্রথম সাইকেলে প্রথম ডোজ প্রয়োগের পর প্যাথলজি বৃদ্ধি হোক বা হ্র্যাস পাক সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়, পটেন্সি বা ঔষধ কিংবা সাইকেল পরিবর্তন করতে হলে ফিলিংস, থট ও একটিভিটি হবে একমাত্র বিচার্য্য বিষয়। তবে অবজাবেশনের ক্ষেত্রে ঘুম, খাওয়া, পায়খানা, মেজাজ ও ভাবনা-চিন্তারও গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিটি সাইকেলে প্রতিটি ঔষধের একাধিক পটেন্সি আগ-পিছ করে এগুতে হবে যতক্ষন ঐ ঔষধে কাজ পাওয়া যাবে। এভাবে ট্রু-ডিজিজগুলিকে পারমানেন্টলি ইন-একটিভ করতে হলে ছয় সাইকেল একাধিকবার রিপিটেশন করা প্রয়োজন হবে নতুবা পুরোপুরি হারানো স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

কয়েক বছর এভাবে চিকিৎসা চর্চা করে আমরা কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অভুতপূর্ব সফলতা পেয়েছি আবার কিছু ক্ষেত্রে অনতিক্রমযোগ্য ব্যার্থতারও সম্মুখিন হয়েছি।

সফলতার দিক :

১. যত জ্বালা-যন্ত্রণা-ব্যাথা নিয়ে রোগী চেম্বারে আসুক না কেন যথেষ্ঠ স্বস্তি নিশ্চিত করে রোগীকে বাড়ীতে পাঠানো সম্ভব হয়, এর জন্য সর্বোচ্চ এক ঘন্টা সময় প্রয়োজন হতে পারে;

২. মৃতপ্রায় অজ্ঞান রোগীকে বিশেষ পদ্ধতিতে ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে এক ঘন্টা থেকে এক দিনের মধ্যে জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়েছে;

৩. যত ভয়ানক ভাইরাস জনিত জ্বর হোক না কেন স্বল্প সময়ের মধ্যে রোগীর আরোগ্য সম্ভব হয় এবং মৃত্যু ঝুঁকি রোধ করা যায়, যেমন- করোনার ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন এবং ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট ভেঙে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া এবং দ্রুততম সময়ে উন্নতি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়;

৪. কয়েকদিনের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, রাগ নিয়ন্ত্রিত হয়;

৫. অবাধ্য শিশু মন কয়েক সপ্তাহর মধ্যে স্বাভাবিক হয়;

৬. এক দুই মাসের মধ্যে মানসিক বিকৃতি অনেকাংশেই দূর হয়;

৭. কিডনি, ইউরেথ্রা কিংবা ব্লাডারে জমে থাকা ছোট ছোট পাথর প্রস্রাবের সাথে বেড়িয়ে আসে, এর জন্য সর্বোচ্চ তিন/চার সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে;

৮. শরীরে বিদ্ধ কাঁটা জাতীয় বস্তু বেড়িয়ে আসে;

৯. নানান প্যাথজেনিক কারণে দেহ-মনের অস্বস্তি খুব সহজে দূর হয়;

১০. প্রচুর ধৈর্য সহকারে দীর্ঘদিন যারা চিকিৎসা নিতে থাকেন তারা তুলনামূলক ভালো থাকেন।

সফলতার পর ব্যর্থতার দিক :

১. দীর্ঘদিনের জ্বর দ্রুত আরোগ্য হয়, কিন্তু দুর্বলতা এতটাই বৃদ্ধি হয় যে রোগীরা অধৈর্য হয়ে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন থাকে না;

২. হাঁপানি বা এ্যাজমা রোগীরা প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে আরাম বোধ করে, কিন্তু কয়েক মাস কিংবা বছর অতিক্রম হলেও প্যাথলজি দূর হয় না;

৩. প্রথমে যে প্যাথলজি নিয়ে রোগী আসে তা দূর হওয়ার পরবর্তিতে অন্য কোন প্যাথলজি দেখা দিলে তা আর দূর হতে চায় না;

৪. দীর্ঘদিনে রোগ ভোগজনিত রোগীরা প্রথম পর্যায়ে শারীরিক-মানসিক স্বস্তি, ভালোলাগা বোধ অর্জন করে কিন্তু বহুকাল চিকিৎসা করেও প্যাথলজি দূর না হওয়ায় হতাশ হয় এবং ক্রমেই শারীরিকভাবে দুর্বলতা প্রকাশ করে এমনকি আর চিকিৎসা গ্রহন করে না;

৫. প্রায়শঃ কোষ্ঠ্যবধ্যতার অভিযোগ করে থাকে যা সহজে দূর হতে চায় না;

৬. একটি কথা প্রায় শুনতে হয়- “ডাক্তার সাহেব আপনি প্রথম প্রথম যে ঔষধ দিতেন তাতে যেমন উপকার হত এখন তেমনটি আর হয় না”;

৭. ক্যানসার রোগীর দ্রুত স্বস্থি ফিরে আসে কিন্তু এক দেড় সপ্তাহ পর কোন ঔষধে আর কাজ পাওয়া যায় না;

৮. বেশ কিছুদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর রোগী পেটে প্রচন্ড গ্যাস হচ্ছে বলে ক্রমাগত অভিযোগ করতে থাকেন;

৯. প্রথম প্রথম ভালো বোধ করলেও বাত জনিত রোগ নিরাময় করা যায় না।

১০. বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলতে চলতে এক সময় চর্মরোগ দেখা দেয় এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠে।

১১. স্যার শ্যামল কুমার দাসের মত-পথ অনুসরণ করে অনেক অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে বটে, কিন্তু এখনও অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। সুতরাং আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। 

বৃদ্ধি ঘটে :

১. চর্ম রোগের চরম বৃদ্ধি ঘটে;

২. হাড় ক্ষয় জনিত রোগ যন্ত্রণা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পায়;

৩. দুর্বল রোগীরা ক্রমাগতভাবে অধিকতর দুর্বল হতে থাকে;

(পরীক্ষামূলভাবে দেখা গেছে এসকল রোগীকে সিএম শক্তি না দিয়ে পঞ্চাশ সহস্রতমিক নিম্নক্রম শক্তি দিয়ে চিকিৎসা করলে এ সমস্যা দেখা দেয় না এবং কাপিং পদ্ধতিতে ঔষধ প্রয়োগ করে ভালো ফল লাভ হয়)

অনুসন্ধানী তথ্য :

১. ক্যানসার, প্রতিবন্ধী শিশু সহ জটিল ও দূরারোগ্য ব্যাধি চিকিৎসায় সফলতা অর্জনের দাবীদার চিকিৎসকগণ নির্ধারিত আটটি ঔষধের পাশাপাশি অন্যান্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এমনকি মাদার টিংচার ও বায়োকেমিক ব্যবহার করে থাকেন ফলে সেটিকে এই পদ্ধতির বিশুদ্ধ সফলতা বলা যাবে না। 

২. আমাদের চিকিৎসা ফেরত রোগীরা অন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রচলিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় দ্রুত উন্নতি লাভ করে থাকেন।

৩. যে সকল চিকিৎসক রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে নির্ধারিত আটটি ঔষধ সহ অন্যান্য ঔষধ ব্যবহার করে চিকিৎসা করে থাকেন তাদের রোগী সন্তুষ্টি এবং সাফল্যের হার অনেক বেশি।

৪. শুধুমাত্র নীতিবোধের কারণে যে সকল চিকিৎসক ঘোষিত নীতি অনুযায়ী আটটি ঔষধে চিকিৎসা করে থাকেন তাদের রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত লোপ পেতে পেতে চেম্বার বন্ধের উপক্রম হচ্ছে।

৫. এখানে কাঙ্খিত সাফল্য নেই আবার ক্লাসিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা না করতে করতে বিভিন্ন ঔষধের জ্ঞান লোপ পাওয়ায় ক্ষোভে দুঃখে কোন কোন চিকিৎসক চেম্বার চালাতে বিভিন্ন পেটেন্ট, বায়োকেমিক, ইলেকট্রো ন্যাচারোপ্যাথি সহ নানান প্যাথিতে ঝুঁকে পড়ছেন।

মন্তব্য :

১. আমাদের যে সকল রোগীর ক্ষেত্রে সফলতা অভুতপূর্ব হয় সে ধরণের রোগীদেরকে সচরাচর রোগীর স্বজনেরা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের প্রতি আস্থা রাখেন না এবং হাসপাতালে ভর্তি করে থাকেন।

২. আমাদের ব্যাপক সাফল্য থাকলেও মানসিক বিকৃতি এবং শিশু মনে অবাধ্যতাকে সাধারণত মানুষেরা রোগ বিবেচনা করে না ফলে চিকিৎসার প্রয়োজনই মনে করেন না।

৩. অর্গাননের ৯ নম্বর সূত্র অনুযায়ী শুধুমাত্র প্যাথলজি দূর হওয়া মানে সুস্থাবস্থা নয়; তেমনই শুধুমাত্র যুক্তিসিদ্ধ মন অর্জিত হলেই তাকে সুস্থাবস্থা বলা যাবে না। উভয় শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক।

৪. অর্গাননের ২ নম্বর সূত্র অনুযায়ী আরোগ্য নিশ্চিত করতে হবে, এর জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করা যায় না।

৫. স্যার শ্যামল কুমার দাস নিজেও বলছেন ঔষধ প্রয়োগ নীতি নিয়ে এখনও পূর্ণাঙ্গতা পায় নি এবং কয়েকমাস পর পর তিনি ঔষধ প্রয়োগনীতি পরিবর্তন করে থাকেন।

৬. রিয়েল হোমিওপ্যাথি চর্চায় এহেন দুরাবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন মনে করে এই প্রচেষ্টা।

৭. স্যার হ্যানিম্যান যেমন হোমিওপ্যাথির জনক, পাদটিকা ১০৬ এ স্যার হ্যানিম্যান দাবী করেছেন- “অর্গানন প্রকাশের প্রায় চল্লিশ বছর পূর্ব থেকে একমাত্র আমি প্রথম চিকিৎসক হিসাবে নিজ দেহে ওষুধসমূহ পরীক্ষার কাজ শুরু করি, পরবর্তিতে কিছু যুবক একাজে সাহায্যোর জন্য এগিয়ে এসেছেন।” সেকারণে তাঁর চেয়ে অধিক যত্নশীল সতর্ক গবেষক কেউ আছেন বলে অনুমিত হয় না। সুতরাং অর্গাননেই দেখা প্রয়োজন ভুলটি কোথায় হচ্ছে, নতুবা সাফল্য এসেও ধরা দিচ্ছে না কেন ? 

হোমিওপ্যাথিক থেরাপিউটিক সিস্টেমে পূর্ণাঙ্গতার কাছাকাছি অর্গানন ষষ্ঠ সংস্করণ থেকে জানা যায়-

পাদটিকা ১৩২- জৈবশক্তির অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া রোধ করার জন্য পঞ্চম সংস্করণে যা বলা হয়েছে তা তদানিন্তন গবেষণার ফল, কিন্তু ১৮৩৮-৩৯ থকে ১৮৪২-৪৩ (পাঁচ বছর) পর্যন্ত ‘ক্রনিক ডিজিজেজ’ পুস্তক লেখা কালীন গবেষণায় নূতন, পরিবর্তিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রথায় এই সমস্ত সমস্যার সামগ্রিক সমাধান হয়েছে। একই সুনির্বাচিত ওষুধ এখন প্রয়োজনে (পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে) প্রতিদিন এবং প্রয়োজন হলে মাসের পর মাস প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন চির-রোগের চিকিৎসায় পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তির ওষুধ প্রথমে এক বা দুই সপ্তাহ নিম্নতম ক্রমগুলি হতে আরম্ভ করার পর উচ্চ শক্তির দিকে অগ্রসর হয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

এই পাদটিকার প্রেক্ষাপট হচ্ছে, পঞ্চম সংস্করণে নির্দেশণা ছিল একটি নির্দিষ্ট শক্তির নির্বাচিত ঔষধ প্রয়োজনে পুনঃপ্রয়োগ করা যাবে। এতে লক্ষনীয় হয় যে জীবনীশক্তি বিনা বাধায় একই শক্তির একই ঔষধ পর পর গ্রহণ করতে পারে না ফলে ১৯৩৮ সালে স্যার হ্যানিম্যান পানিতে মিশিয়ে ঔষধকে বিভক্তিকরণ সাপেক্ষে ১০ ঝাঁকি দিয়ে শক্তি পরিবর্তিত করে প্রয়োগের নির্দেশ দেন যা ক্রনিক ডিজিজেস বইতে উল্লেখ করেছেন; এতেও দেখা গেল শততমিক পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত ঔষধ পানিতে মিশিয়ে অধিক ঝাঁকি দিয়ে শক্তি পরিবর্তিত করতে গেলে শক্তির ভয়ানক স্ফুরণ ঘটে যা মানব শরীরযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাই তিনি শততমিক ঔষধ ১০ ঝাঁকির পরিবর্তে মাত্র ২ ঝাঁকি দিয়ে প্রয়োগের নির্দেশ দেন। কিন্তু দেখা গেল এতেও জৈবশক্তির অবাঞ্চিত প্রতিক্রিয়া রোধ করা সম্ভব হয় না। পাদটিকা ১৫৫ অনুযায়ী শিক্ষা হচ্ছে, শততমিক পদ্ধতিতে নিম্নশক্তির এক ফোঁটা ওষুধের সাথে ১০০ ফোঁটা সুরাসার (১ : ১০০ অনুপাত) মিশিয়ে কয়েকবার ঝাঁকি দিয়ে সর্বতোভাবে উচ্চশক্তিতে উন্নীত করা সম্ভব হয়না বলে স্যার হ্যানিম্যানের নিকট শ্রান্তিকর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে। তবে নবতর পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে পাঁচ গ্রেণে ৫০০ টি হয় এমন ১০ নম্বর গ্লোবিউলসে এক ফোঁটা ওষুধ মিশ্রিত হয় ফলে এর অনুপাত দাড়ায় ১ : ৫০,০০০ বা আরও বেশি। শততমিক অনুপাতে ওষুধ তৈরি করে অধিক ঝাঁকি দিয়ে উচ্চতর শক্তিতে পরিণত করা সম্ভব হলেও ভেষজের আনুপাতিক হার বেশি থাকায় সেটি দুর্বল রোগীদের ক্ষেত্রে বিপদের কারণ হতে পারে।

 এসকল সমস্যা সমাধান করতে গিয়েই মূলত পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তিকৃত ঔষধ প্রস্তুত প্রণালীর উদ্ভাবন হয়েছে এবং এই ঔষধের সূত্র ২৪৬, ২৪৭ ও ২৪৮ অনুযায়ী প্রয়োগকে নিরাপদ ও পূর্ণাঙ্গ মেথড হিসাবে দাবী পূর্বক শততমিক শক্তিকৃত ঔষধকে বাতিল করা হয়েছে। এবং তিনি এটিও ঘোষণা দিয়েছেন- “শক্তির একটি সীমা থাকা উচিত যা ৩০ এর উর্দ্ধে হবে না।

পাদটিকা ১৩৮- যতদুর সম্ভব যথার্থ ক্ষুদ্র মাত্রায় ওষুধ সেবনের অব্যবহিত পরেই রোগীর শারীরিক-মানসিক উন্নতির নিদর্শন আশা করা যেতে পারে। প্রকারান্তরে সুনির্বাচিত ওষুধও অনাবশ্যক বৃহত্তর মাত্রায় প্রয়োগ করা হলে খুব প্রচন্ড প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘস্থায়ী বিশৃঙ্খলা বিকশিত করে (এখানে ঔষধের অধিকতর শক্তি ও পরিমানকেই বৃহত্তর মাত্রা বলা হয়েছে)। যার ফলে সহসা কোন উন্নতি লক্ষ্য করা যায় না। হোমিওপ্যাথি যথার্থভাবে আয়ত্ব না হলেও অহংকারে পরিপূর্ণ ব্যক্তিরাই সাধারণত এই নিয়ম লঙ্ঘন করে থাকেন, যাদের হোমিওপ্যাথিক অনুরাগী হিসাবে দাবী করার কোন অধিকার নেই।

সূত্র ২৭৬- নির্বাচিত ওষুধ যতবেশি রোগের সদৃশ হবে এবং যতবেশি উচ্চশক্তিকৃত হবে এর বড়মাত্রাসমূহ ততোধিক ক্ষতি সাধন করে, এমনকি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের ক্ষতি থেকে এরূপ হোমিওপ্যাথিক ওষুধে অধিকতর ক্ষতির কারণ ঘটায়। সুনির্বাচিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধের বড় মাত্রাসমূহ, বিশেষতঃ ঘন ঘন প্রয়োগ করলে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রকৃত ক্ষতিসাধন করে এবং প্রায়ই জীবন বিপন্ন করে তোলে কিংবা রোগ আরোগ্যকে অসাধ্য করে দেয়, যদিও মূলরোগ লক্ষণের বিলোপ ঘটে। 

এক সময় যারা সিএম শক্তির ঔষধ উপর্যুপরি ঘন ঘন সেবন করিয়েছেন তাঁরা তাঁদের পূর্বের কেসগুলি থেকে মূল্যায়ন করুন স্যার হ্যানিম্যানের এই দৃঢ় সিদ্ধান্তকে কোন বিবেচনায় অবজ্ঞা করেছেন এবং গবেষণার স্বার্থে চেম্বারে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা সত্বেও নির্বিচারে সকল রোগীদের উপর এভাবে প্রয়োগ করা কতটা গ্রহণযোগ্য ছিল! এটি মারাত্বক ভুল ছিল বলেই এখন রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে সিঙ্গেল ডোজের প্রচলন শুরু করা হয়েছে, সেকারণে এরপরও আমরা মনে করি রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব মেডিসিন নিয়ে স্যার হ্যানিম্যানের সিদ্ধান্তসমূহকে মান্যতা দিয়ে আরও নির্ভরযোগ্য গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

পাদটিকা ১৬৩- শুধুমাত্র বড় মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের একটি মাত্র ব্যতিক্রম রয়েছে; যথা- সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস এর প্রাইমারী সিম্পটমস যেমন- চুলকনা, উপদংশক্ষত এবং ডুমুরাকৃতির আঁচিলসমূহ যদি চামড়ার উপরিভাগে প্রকাশিত হয় তখন ওষুধের প্রথম শক্তি থেকে বড় মাত্রায় প্রস্তুত করে ঘন ঘন প্রয়োগ শুরু করতে হবে এবং ক্রমোন্নত উচ্চ শক্তিতে অগ্রসর হতে হবে। 

এ ক্ষেত্রে চিকিৎসককে প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী সিম্পটমস এর মধ্যকার পার্থক্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক; কেননা সেকেন্ডারী সিম্পটমসের চিকিৎসায় বড় এবং ঘন ঘন মাত্রা গ্রহনযোগ্য নয়। 

সূত্র ২৭৭- সেই একই কারণে ওষুধের মাত্রা যতবেশি ক্ষুদ্র হবে, যতবেশি সদৃশভাবে সুনির্বাচিত হবে ততবেশি হিতকর ও আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকর হবে। সেজন্য মাত্রাকে আরোগ্যের উপযোগী পর্যায়ে হ্রাস করা হলে অধিকতর হিতকর হয়। 

সূত্র ২৭৮- তবে সর্বাপেক্ষা উপযোগী মাত্রার ক্ষুদ্রত্বের পর্যায় কি এবং মাত্রার পরিমান কতটুকু হলে সর্বাপেক্ষা স্বচ্ছন্দ ও দ্রুত আরোগ্য হবে তা সাধারণভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়; প্রত্যেকটি রোগে নির্ভুল পরীক্ষা, রোগীর সংবেদনশীলতার সতর্ক পর্যবেক্ষণ এবং যথার্থ অভিজ্ঞতা থেকে চিকিৎসককে নিজ থেকে এই মাত্রার পরিমান ঠিক করে নিতে হবে। কিন্তু এই মাত্রার পরিমান অ্যালোপ্যাথিক চিন্তাধারা থেকে কোনভাবেই বৃহত্তর করা যাবে না বরং কতটুকু ক্ষুদ্রতম করা যায় সেটি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে সকল রোগীর ক্ষেত্রে নির্বাচিত ঔষধের শুরুতে সিএম-পটেন্সি প্রয়োগ নিয়ে চলমান যে বিতর্ক ও সংশয় রয়েছে তা নিরসনে স্যার হ্যানিম্যানের এই নির্দেশণার উপর প্রত্যক্ষ প্রয়োগের ফলাফল পুনঃ যাঁচাই করা আমরা আবশ্যক মনে করি। কেননা সরাসরি সিএম-পটেন্সি প্রয়োগে কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হতে দেখা গেছে; ক্যানসার বিকশিত অবস্থায় যখন রোগীরা অবশেষে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিতে আসেন তখন সরাসরি সিএম-পটেন্সি প্রয়োগের পর তীব্র যন্ত্রণার দ্রুত লাঘব হলেও প্রায়শঃ অচিরেই আর কোন ঔষধে উপকার পাওয়া যায় না এবং রোগীর ক্রমবনতি পরিলক্ষিত হয় কিংবা মৃত্যু ঘটে, যদিও এরকম ঘটনায় ‘পিসফুল ডেথ্’ বলে এক ধরণের আত্মতৃপ্তি লাভের চেষ্টা চিকিৎসকের থাকে। কোন কোন হোমিওপ্যাথিক মহান ঋষিগণের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে সাসসেপটিবিলিটি বিবেচনায় ডায়নামিক ও অর্গানিক প্যাথলজি সম্পর্কিত তথ্যের ভিত্তিতে পটেন্সি প্রয়োগের পরামর্শ অনুসরণ করেও এই গবেষণা এগিয়ে নেয়া যেতে পারে। সুত্র ১৩৪ অনুযায়ী একথাও স্মরণে রাখা জরুরী- “সর্বপ্রকার বাহ্যিক প্রভাবসমূহ, বিশেষতঃ ওষুধসমূহ নিজস্ব প্রকৃতি অনুসারে জীবন্ত শরীরযন্ত্রে ব্যক্তিভেদে একই সময়ে একই রকমে প্রভাব নাও ফেলতে পারে।” ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির পার্থক্য রয়েছে, সুতরাং বৈজ্ঞানিক যুক্তির বিচারে পটেন্সি কখনও শুরুতে অধিকতর কোন একটি উচ্চশক্তি সকলের জন্য একই বা সার্বজনীন হতে পারে না, বড়জোর সার্বিক বিবেচনায় নিরাপদ একটি শক্তি ও মাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে যার ইঙ্গিত স্বয়ং স্যার হ্যানিম্যান দিয়ে গেছেন; তবে সেই শক্তি অবশ্যই সিএম এবং ঘন ঘন মাত্রায় নয় কেননা এতে তাৎক্ষনিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে যা চির-রোগের ক্ষেত্রে একেবারেই অনুচিত বলে স্যার হ্যানিম্যান ঘোষণা দিয়েছেন।

এখানে প্রশ্ন আসে, মারাত্মক-মুমুর্ষ-মৃতপ্রায়-অজ্ঞান এমার্জেন্সি রোগীর চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হাড্রোফেবিনাম, কার্বোভেজ এবং সোরিনাম ঔষধের শততমিক সিএম ও ২০০ পটেন্সি পর্যায়ক্রমিক প্রয়োগে আশাতীত উত্তম ফল লাভ করা যায়, সেক্ষেত্রে আমরা কি এই অভুতপূর্ব সাফল্যকে বর্জন করব ?

এর জবাব সূত্র ৬৭ তে রয়েছে- “কতকগুলি ক্ষেত্রে রোগীর এমন সংকটাপন্ন অবস্থা উপস্থিত হয় যে চিকিৎসার জন্য একঘন্টা, পনের মিনিট, এমনকি একমুহুর্ত সময় পাওয়া যায় না, অবস্থা সাংঘাতিক হয়ে ওঠে এবং মৃত্যু ঘনিয়ে আসে তেমন অবস্থায় হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কাজ করার সময় দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা সঙ্গত নয় বরং এই জরুরী অবস্থায় সাময়িক উপশমদায়ী যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি সমর্থন ও অনুমোদন যোগ্য এবং আইনানুগ বিবেচনা করতে হবে।”

অন্যান্য রোগী চিকিৎসায় যে নির্দেশণাসমূহকে গুরুত্ব দিতে হবে-

সূত্র ৩৪- ওষুধের অধিকতর শক্তিই নিরাময়ের জন্য যথেষ্ট নয়, বি-সদৃশ কোন রোগ যত শক্তিশালীই হোক সে শরীর মধ্যে পূর্ব থেকে অবস্থিত অন্য কোন রোগ নিরাময় করতে পারে না। লক্ষণ সদৃশ নিদৃষ্ট ওষুধ দ্বারা বলবত্তর একটি সদৃশ কৃত্রিম রোগ সৃষ্টিতে অসমর্থ হলে কখনই আরোগ্যর সূত্রপাত হবে না।

সূত্র ৪৯- প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে অসংখ্য হোমিওপ্যাথিক রোগসমূহের হোমিওপ্যাথিক নিরাময়ের জন্য পর্যবেক্ষকগণকে আরও মনোযোগী এবং প্রকৃতির সহায়তার উৎস অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।

এই নির্দেশনায় দাবী রাখে যে, রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে স্যার শ্যামল কুমার দাস মনোনীত আটটি ঔষধের বাইরে যেসকল হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ রয়েছে তা সবই একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট রক্ষিত সম্পদ ও রোগ নিরাময়কারী অস্ত্র হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত, এদের কাউকে অবজ্ঞা করা যাবে না।

সূত্র ৫১- প্রকৃতিতে সকল রোগসমূহের প্রতিকার রয়েছে, যথেষ্ঠ গবেষণায় এগুলি খুঁজে বের করা প্রয়োজন এবং প্রকৃতির এসকল উপাদানগুলিকে আলোড়িত ও বিভক্ত করে এর অন্তর্নিহীত শক্তিকে অসীম শক্তির পর্যায়ে রূপান্তরিত করা যায়। চিকিৎসার প্রয়োজনে ওষুধের শক্তিকে বাড়ানো-কমানো যেতে পারে। আবার আরোগ্য সম্পাদনের পর জীবনীশক্তি দ্বারা এসকল কৃত্রিম রোগ শক্তি পরাভুত হয়ে আপনা আপনি নিঃশেষিত হয়ে যায়। ফলে স্থায়ী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

সূত্র ৬৩- প্রতিটি ওষুধ জীবনী শক্তির উপর ক্রিয়া প্রকাশ করে কম-বেশি জীবনী শক্তিকেই বিপর্যস্ত করে যারফলে মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কিছু না কিছু পরিবর্তন ঘটে, এই ক্রিয়াকে প্রাইমারী একশন কিংবা প্রাথমিক বা মুখ্য ক্রিয়া বলা হয়। মূলতঃ মুখ্য ক্রিয়া ওষুধ এবং জীবনী শক্তির যৌথ ক্রিয়ার ফল। এরপর জীবনী শক্তি এককভাবে ওষুধের ক্রিয়াকে প্রতিরোধ ও বিনষ্ট করে, এই ক্রিয়াকে সেকেন্ডারী বা অটোমেটিক বা কাউন্টার একশন কিংবা গৌণক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া বলা হয়।

পাদটিকা ৬২- তথাকথিত অতি বিজ্ঞতার সাথে কেউ কেউ বিভিন্ন ওষুধের মিশ্রণে রোগ নিরাময়ে ব্যবস্থাপত্র প্রস্তুত করে থাকেন, এই প্রক্রিয়ায় মূলত তারা মানুষের জীবনকে সমধিক বিপন্ন করে থাকেন।

পাদটিকা ৬৪- উপশমদায়ক চিকিৎসায় রোগীর দেহে যে পরিমান শক্তি বৃদ্ধি পায় পরবর্তিতে সেই পরিমান শক্তিই লোপ পায়, অধিকন্তু অনেক কিছু ক্ষতির সম্ভবনা বর্তমান থাকে। 

পাদটিকা ৬৬- উপশমদায়ী ওষুধ সমূহ প্রয়োগ করে আজ পর্যন্ত কখন কেহই স্থায়ী ও যথার্থভাবে রোগ বৃদ্ধিকে ঠেকাতে পারে নাই।

সুতরাং “আপাতত রোগীকে আরাম দেওয়ার” জন্য উপশমদায়ক ঔষধ প্রয়োগ নীতিকে হোমিওপ্যাথি সমর্থন করে না বরং বিরোধিতা করে।

নিরাময়কারী ঔষধ নির্বাচন (Curative medicine) :

সূত্র ১৪২- আরোগ্য সাধনের জন্য কীভাবে অবিমিশ্র ওষুধের কোন কোন লক্ষন মূল ব্যাধির অবিকৃত লক্ষণরূপে নিরূপন করা হবে তা উন্নত বিচার-বুদ্ধি সাপেক্ষ ব্যাপার। পারদর্শী পর্যবেক্ষ বা চিকিৎসকগণের সেটির মীমাংশা করা কর্তব্য। 

অর্থাৎ ড্রাগ প্রুভিংয়ে প্রাপ্ত ওষুধগুলির মধ্যেই রিয়েল হোমিওপ্যাথি মতে মূল ব্যাধি তথা- ট্রু-ডিজিজের লক্ষণ সদৃশ ঔষধ রয়েছে যা স্যার হ্যানিম্যান পারদর্শী পর্যবেক্ষক তথা ভবিষ্যতের গবেষকগণের উপর মিমাংশা করার ভার অর্পন করেছেন।

পাদটিকা ১০৪- ওষুধ পরীক্ষার বহুকাল পূর্বে দৃষ্ট বা অদৃষ্ট লক্ষণ সমূহ যদি রোগের সমগ্র ভোগকালে দেখা যায় তবে সেগুলি ঔষধজনিত নূতন লক্ষণ হিসাবে গণ্য হবে। 

এখানে স্যার কেন্ট এর নির্দেশণা ‘গো-ব্যাক’ অনুযায়ী ঔষধ অনুসন্ধানের ও প্রেসক্রিপশনের এবং স্যার এইচ. এ. রবার্টস এর মত অনুযায়ী শৈশবের লক্ষণ থেকে সিমিলিমাম নির্বাচন নিশ্চিতকরণের ইঙ্গিত রয়েছে, এই পদ্ধতি অনুসরণ করে স্যার শ্যামল কুমার দাস জেনেটিক্স ও ব্যক্তির জীবন দর্শন বিশেষতঃ শৈশবের জীবনদর্শনকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে ট্রু-ডিজিজের লক্ষণ সদৃশ রিয়েল হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচন করেছেন।

সূত্র ২১৭- এই সকল রোগে চিকিৎসককে দৈহিক লক্ষণ, বিশেষঃত মানসিক ও প্রকৃতিগত অবস্থা যথার্থভাবে বোঝার জন্য মানুষটির প্রধান লক্ষণের বিশিষ্টতাযুক্ত সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে সতর্কতার সাথে পরিচিত হতে হবে এবং এর ভিত্তিতে সম্পূর্ণ রোগকে ধ্বংস করার জন্য ওষুধের অন্তর্নিহিত চরিত্রগত লক্ষণের সাথে মিলিয়ে ওষুধ নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত ওষুধটির মধ্যে চিকিৎসাধীন রোগীর শুধুমাত্র শারীরিক লক্ষণ নয় বরং (রোগীকে মানুষ বিবেচনা করে) বিশেষভাবে তার মানসিক ও ভাবাবেগজনিত অবস্থার সাদৃশ্য অধিক পরিমানে থাকতে হবে।

সূত্র ১৬৪- ওষুধের লক্ষণ সংখ্যা সমষ্টি বিচারের চেয়ে স্বল্প হলেও অসাধারণ ও চরিত্রগত বিশিষ্টতা জ্ঞাপক লক্ষণ অনেক মূল্যবান।

সূত্র ১৬৫- যদি নির্বাচিত ওষুধ সাধারণ লক্ষণসমূহের সাথে (বমনভাব, দুর্বলতা, মাথাধরা প্রভৃতির) সদৃশ হওয়া স্বত্বেও চরিত্রগত বিশিষ্টতা জ্ঞাপক লক্ষণের বা রোগীর ব্যক্তিগত চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন লক্ষণ না থাকে তবে সেই অ-হোমিওপ্যাথিক ওষুধে আরোগ্যের আশা করা যায় না।

এখানে একমাত্র প্যাথলজিক্যাল সিম্পটমের সাথে সদৃশ ওষুধকে স্যার হ্যানিম্যান অ-হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন! সেকারণে রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে ব্যক্তির জীবন দর্শন বা ব্যক্তি চরিত্রের লক্ষণ সদৃশ ওষুধের গুরুত্ব হোমিওপ্যাথিতে অবশ্যই মহা মূল্যবান হিসাবে গণ্য করা যায়।

সূত্র ২০৯- বার বার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোগীর স্পষ্ট ও অদ্ভুত (চরিত্রগত) লক্ষণসমূহকে বিস্তারিতভাবে গ্রহণ করে রোগের যথাসাধ্য পূর্ণাঙ্গ প্রতিচ্ছবি অঙ্কনের চেষ্টা থাকতে হবে। অতঃপর পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি অবলম্বন করে প্রথমে একটি এন্টি সোরিক বা অন্য কোন সদৃশতম ওষুধ নির্বাচন করে চিকিৎসা আরম্ভ করতে এবং অগ্রসর হতে হবে।

সূত্র ২৭৫- রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধের উপযোগিতা কেবলমাত্র যথার্থ, সদৃশ নির্বাচনের উপরই নির্ভর করে না, মাত্রার উপযুক্ত আকার অর্থাৎ ক্ষুদ্রত্বের উপরেও তা নির্ভরশীল। রুগ্ন অবস্থায় অত্যন্ত বড় মাত্রায় সম্পূর্ণ সদৃশ ওষুধও মাত্রার আধিক্যের কারণে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বড় মাত্রায় শরীর-যন্ত্রের অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং প্রাকৃতিক রোগের দ্বারা আক্রান্ত অঙ্গ-সমূহের উপর অনাবশ্যক ও প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। 

২৭২ নম্বর সূত্র অনুযায়ী ঔষধ সিক্ত একটি  ১০ নং গ্লোবিউল হচ্ছে সাধারণভাবে নির্ধারিত ক্ষুদ্র মাত্রা; যদি পানিতে ঔষধ তৈরির সময় একাধিক গ্লোবিউল দেওয়া হয় তবে মাত্রা বড় হবে, গ্লোবিউলের সংখ্যা যত বেশি হবে মাত্রা তত বড় হবে। ২৭৬ নম্বর সুত্র অনুযায়ী যদি ঔষধ মিশ্রিত পানি ঘন ঘন অধিক পরিমানে সেবন করা হয় তবে মাত্রাও বড় বলে গণ্য হবে।

সূত্র ২৮২- চিকিৎসাকালে প্রথম মাত্রা প্রয়োগেই যদি তথাকথিত হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি অর্থাৎ প্রথমে পরীলক্ষিত মূল রোগের সু-স্পষ্ট বৃদ্ধি ঘটে তার অর্থ মাত্রা বড় হয়েছে; শুধুমাত্র ঝাঁকি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না যতক্ষণ না মাত্রা আরও ক্ষুদ্র না করা হবে (এখানে কাপিং পদ্ধতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে)।

সূত্র ২৮৩- ক্ষুদ্র মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে যদি চিকিৎসক তাঁর মানবীয় দুর্বলতার জন্য ভুল ওষুধ নির্বাচন ও প্রয়োগ করেন তবে জীবনী শক্তির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় সেই ওষুধের প্রভাব দূর হয়ে যায়, রোগীকে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় না।

পাদটিকা ১৬১ থেকে জানা যায়, অর্গাননের ৬ষ্ঠ সংস্করণ রচনার ২০ বছর পূর্বে স্যার হ্যানিম্যান নিজে উত্তম উপায় না জানা থাকার কারণে বড় মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার করতেন যা কেউ কেউ রেফারেন্স হিসাবে নিজেদের বড় মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের স্বপক্ষে যুক্তি দেখায়; এহেন প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ অগ্রহনযোগ্য।

পাদটিকা ১৬২- বৃহৎমাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করলে অভ্যন্তরীন মুখ্য অঙ্গসমূহ যেমন- যকৃত, প্লীহা ক্ষতিগ্রস্ত করে মৃত্যুর দিকে ক্রমশঃ না টানলেও স্বাস্থ্যকে বহুবছর পর্যন্ত শোচনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়।

সূত্র ২৮১- যেসকল রোগীদের মধ্যে অসহিষ্ণুতার মাত্রা কম তাঁদের ক্ষেত্রে দ্রুত গতিতে উচ্চতর শক্তিতে অগ্রসর হওয়া যায় কিন্তু অসহিষ্ণুতার মাত্রা যাদের বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সতর্কতার সাথে ক্রমোন্নত উচ্চশক্তিতে অগ্রসর হতে হবে। অসহিষ্ণু রোগীদের অনুভূতিপ্রবণতার মাত্রা স্বাভাবিক রোগীদের তুলনায় প্রায় একহাজার গুণ বেশি থাকে।

সূত্র ১৬১-  প্রথম ঘন্টায় বা প্রথম কয়েক ঘন্টায় তথাকথিত সদৃশ বৃদ্ধিকে ওষুধের প্রাথমিক ক্রিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, এটি অচির রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে গ্রহনীয় হলেও চির রোগের ক্ষেত্রে এরকমটি হওয়া উচিৎ নয়।

বলা হয়েছে প্রথমেই নির্বাচিত ঔষধের সিএম শক্তি ব্যবহারের পর বৃদ্ধি ঘটলে ২০০ শক্তি দিয়ে তা নিউট্রিলাইজ করতে হবে; এহেন প্রচেষ্টাকে এই সূত্রের নির্দেশনা কি কোনভাবে সমর্থন করে?

সূত্র ২৭৬- নির্বাচিত ওষুধ যতবেশি রোগের সদৃশ হবে এবং যতবেশি উচ্চশক্তিকৃত হবে এর কড়ামাত্রাসমূহ ততোধিক ক্ষতি সাধন করে, এমনকি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের ক্ষতি থেকে এরূপ হোমিওপ্যাথিক ওষুধে অধিকতর ক্ষতির কারণ ঘটায়। সুনির্বাচিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধের বড় মাত্রাসমূহ, বিশেষতঃ ঘন ঘন প্রয়োগ করলে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রকৃত ক্ষতিসাধন করে এবং প্রায়ই জীবন বিপন্ন করে তোলে কিংবা রোগ আরোগ্যকে অসাধ্য করে দেয়। 

আবারও বলছি, এক সময় যারা সিএম শক্তির ঔষুধ উপর্যুপরি ঘন ঘন সেবন করিয়েছেন তাঁরা তাঁদের পূর্বের কেসগুলি থেকে মূল্যায়ন করুন স্যার হ্যানিম্যানের এই দৃঢ় সিদ্ধান্তকে কোন বিবেচনায় অবজ্ঞা করেছেন এবং গবেষণার স্বার্থে চেম্বারে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা সত্বেও নির্বিচারে সকল রোগীদের উপর এভাবে প্রয়োগ করা কতটা গ্রহণযোগ্য ছিল! এটি মারাত্বক ভুল ছিল বলেই এখন রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে সিঙ্গেল ডোজের প্রচলন শুরু করা হয়েছে, আমরা এখনও মনে করি রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব মেডিসিন নিয়ে স্যার হ্যানিম্যানের সিদ্ধান্তসমূহকে মান্যতা দিয়ে আরও নির্ভরযোগ্য গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সেকারণেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।

পাদটিকা ৭৭- এক সময়ে সোরাকে সহস্রমুন্ডু দানবের সাথে তুলনা করে প্রতিটি চির-রোগকে আলাদা আলাদা বিবেচনা করে হোমিওপ্যাথিক প্রচুর ওষুধের মধ্য থেকে ড্রাগ প্রুভিংয়ের ভিত্তিতে লক্ষণ-সদৃশ ওষুধ নির্বাচন করা হত এবং এই চিকিৎসায় অভুতপূর্ব সফলতার কারণে সেটি আনন্দের বিষয় ছিল (এখানে স্যার হ্যানিম্যান তাঁর প্রথম জীবনে হোমিওপ্যাথিক সাফল্যের কথা বর্ণনা করেছেন যাকে ক্ল্যাসিক্যাল বা আদি হোমিওপ্যাথি বলা হয়, স্যার কেন্ট যাকে সুপারফিসিয়াল হোমিওপ্যাথি হিসাবে উল্লেখ করেছেন), কিন্তু এখন মায়াজম জনিত চির-রোগসমূহের আরোগ্যের জন্য মায়াজমের লক্ষণ সদৃশ অধিক কার্যকর ওষুধ হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে যা দীর্ঘ ১২ বছর ক্লিনিক্যাল প্রুভিংয়ের পর ‘ক্রনিক ডিজিজেজ’ বইতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই ওষুধ প্রয়োগে যে সাফল্য পাওয়া যাবে তা আরও অধিক আনন্দের বিষয় হবে (এখানে স্যার হ্যানিম্যান উৎকর্ষসাধিত আরোগ্যে নিষ্কন্টক হোমিওপ্যাথিক চর্চার কথা বর্ণনা করেছেন যাকে স্যার কেন্ট রিয়েল হোমিওপ্যাথি হিসাবে উল্লেখ করেছেন)। যেমন- সোরাজনিত চির-রোগসমূহের জন্য সোরা বিরোধী অধিক কার্যকর ওষুধ প্রস্তুত ও প্রয়োগ প্রণালী প্রকাশিত হয়েছে, প্রকৃত চিকিৎসকগণ এই সোরার লক্ষণ সদৃশ সোরা বিরোধী স্পেসিফিক ওষুধ প্রয়োগ করে প্রায় সব সোরাজনিত রোগীর নির্মল আরোগ্যে সম্পাদন ও মহোপকার সাধন করতে পারেন। 

রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে মায়াজমের লক্ষণ সদৃশনীতি অনুযায়ী স্যার শ্যামল কুমার দাস উদ্ভাবিত ছয়টি ট্রু-ডিজিজের জন্য মাত্র আটটি ওষুধ নির্বাচনের প্রচেষ্টা যে অর্গানন সম্মত এই পাদটিকাটি তার অনন্য প্রমান; তবে লক্ষণীয় বিষয় অধিকতর উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবনের পরও স্যার হ্যানিম্যান পূর্বে আবিষ্কৃত অন্যান্য ওষুধের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাকে বাতিল ঘোষণা করেননি, সম্ভত রোগের মূল কারণ বিবেচনা করে চিকিৎসায় যদি প্যাথলজি কোনরূপ দূর করা না যায় তখন ঔষধের প্যাথজেনিক লক্ষণকে বিবেচনা করে পরিস্থিতি উত্তরণের পথ সুগম রেখেছেন। স্যার হ্যানিম্যান যে পথ খোলা রেখেছেন আমরা সে পথ বন্ধ করতে চাইছি কোন সফলতার অধিকার নিয়ে এবং তার কি কোন ক্লিনিক্যাল প্রুভিং আমাদের সামনে রয়েছে, নাকি স্যার শ্যামল কুমার দাসের কাছে আছে ? স্যার শ্যামল কুমার দাসের কাছে যে তেমন কোন প্রমানপত্র নেই তা বোঝা যায় তাঁর একের পর এক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব মেডিসিনের পরিবর্তনের ঘোষণা থেকে, কয়েকদিন পর পর এই পরিবর্তনও গবেষণার যথার্থতা নিয়ে সন্ধেহের উর্দ্দেক করে, কেননা মানব দেহে ঔষধ প্রয়োগ করে তার ফলাফল নিশ্চিত হতে যতটা সময়ের প্রয়োজন হতে পারে তার সামান্যতম সময়ের অপেক্ষা তিনি করেন না। চেক রি-চেক তিনি বাস্তবে ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে করেন নাকি চিন্তা চেতনায় করেন এটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে! আমদের মনে রাখতে হবে দর্শন তাত্ত্বিক বিষয় যার গবেষণা বই-পত্র থেকে তথ্য নিয়ে নিজস্ব ভাবনায় সম্পন্ন হতে পারে, কিন্তু ঔষধ প্রয়োগ নীতি মানুষের উপর বাস্তব প্রয়োগ থেকে নিশ্চিত করতে হয় যেমনটি স্যার হ্যানিম্যান করেছেন। 

এখানে স্যার কেন্টের একটি উদ্বৃতি দেওয়া হয়, “রোগের পরিনামফল বিবেচনায় ঔষধ নির্বাচন ও প্রয়োগ করলে পরিনামফল দূর হবে ঠিকই; কিন্তু সিকনেস বা প্রকৃত অসুস্থতার চিকিৎসা না করলে ভিতরে ভিতরে আসল রোগ বাড়তে থাকে।” স্যার শ্যামল কুমার দাস ব্যাখা করেছেন যে, এই উদ্বৃতিতে রোগের পরিনাফল বা প্যাথজেনিক লক্ষণের চিকিৎসাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই- এটি একটি শর্তযুক্ত বক্তব্য (Conditional speach), এধরণের বক্তব্যে একটি শর্ত পুরণের সাথে অপর অংশের পরিনতি নির্ভর করে। অর্থাৎ যদি সিকনেসের চিকিৎসাকে অবজ্ঞা করে শুধুমাত্র প্যাথজেনিক লক্ষণের চিকিৎসা করা হয় তবে আসল রোগের বৃদ্ধি ঘটবে; তদ্রুপ যদি শুধুমাত্র সিকনেসের চিকিৎসা করা হয় তবে প্যাথজেনিক লক্ষণ নিরাময় নাও হতে পারে। সেকারণেই স্যার কেন্ট দৃঢ়ভাবে বলেছেন, “লক্ষণসমষ্টি দূর হলেই কেবল রোগের কারণ বিদূরীত হবে।” তাঁর নিজ কর্তৃক পরিচালিত চিকিৎসা পদ্ধতিও এমন ছিল; নিশ্চই তিনি এমন কথা বলেননি যা নিজে অনুসরণ করতেন না! তবে দুঃখের বিষয় তিনি অর্গাননের ষষ্ঠ সংস্করণ দেখে যেতে পারেননি, সেকারণে শততমিক ঔষধ ব্যবহার করেছেন। একদিকে তিনি বিভিন্ন ঔষধের সিএম পটেন্সি প্রয়োগ করেছেন, আবার সতর্ক করে এ কথাও বলেছেন- “একজন আনাড়ি চিকিৎসকের হাতে সিএম পটেন্সি থাকলে তার চেয়ে ধারালো ছুরি হাতে থাকা ব্যক্তির সাথে এক ঘরে থাকা আমি বেশি নিরাপদ মনে করি।”

লক্ষণসমষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে স্যার হ্যানিম্যান অর্গাননে ৬, ৭ ও ৮ নম্বর সূত্রে বলেছেন, (৬) লক্ষণ সমষ্টি থেকে রোগের প্রকৃতি তথা মানবদেহ কতটা বিকৃত হয়েছে তা উপলব্ধি করা যায়, (৭) লক্ষণ সমষ্টিই অভ্যন্তরীণ মূল ব্যাধির বাহ্যিক বিকাশ যা জীবনী শক্তিকে প্রভাবিত করে প্রকাশিত হয় তাই একে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই, লক্ষণ সমষ্টি অনুসন্ধানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মায়াজমের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা। (৮) লক্ষণ সমষ্টি অপসারিত না হলে মূল ব্যাধি দূর হয় না তথা স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলা যাবে না।

এ পর্যন্ত উদ্বৃতি ও আলোচনা থেকে নিশ্চয় আমরা বুঝতে পেরেছি স্যার শ্যামল কুমার দাস রিয়েল হোমিওপ্যাথির দর্শনগত রহস্য সুনিপুণভাবে উন্মোচিত করতে সক্ষম হলেও প্রয়োগগত দিক থেকে অর্গাননকে অবজ্ঞা করায় নিশ্চিৎ সাফল্য অধরা রয়ে গেছে!

সুতরাং সিদ্ধান্ত নিতে হবে রোগ প্রকৃত অর্থে নিরাময়কারী হিসাবে (Curative medicine) নিয়মিত প্রয়োগের জন্য দুই ধরণের ঔষধ গ্রহনযোগ্য। প্রথমতঃ ব্যক্তির ফিলোসোফিক্যাল লক্ষণ সদৃশ নির্বাচিত ঔষধ যা ইতিমধ্যেই স্যার শ্যামল কুমার দাস উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং দ্বিতীয়তঃ যদি প্রয়োজন হয় ব্যক্তির প্যাথজেনিক লক্ষণ সদৃশ নির্বাচিত পপুলেশন মেডিসিন যা মেটেরিয়া মেডিকার জ্ঞান থেকে নির্ধারিত হবে।

একথাও মনে রাখা জরুরী যে, সূত্র ১৫৬ তে বলা হয়েছে- যতই সুনির্বাচিত হোক না কেন এমন কোন হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রায়ই নাই যা অত্যন্ত উত্তেজনা ও অনুভুতিপ্রবণ রোগীদের ক্ষেত্রে বর্তমান কষ্টের পাশাপাশি একটি সাধারণ অস্বাভাবিক বিশৃঙ্খলা ও নূতন কোন লক্ষণ সৃষ্টি করে না; কেননা সমবাহু ও সমকোন-বিশিষ্ট ত্রিভুজের ন্যায় ওষুধের লক্ষণ ও রোগের লক্ষন হবহু মিল পাওয়া যায় না! কিন্তু এই নগণ্য প্রভেদ জীবন্ত শরীরযন্ত্রের প্রচ্ছন্ন কার্যকারিতায় (কর্মশক্তিতে) সহজেই দূরীভুত হয়। জীবনাচারে কোন বাঁধা না থাকলে স্বাস্থ্যের উন্নতি অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে।

অর্থাৎ নির্বাচিত ঔষধ হবহু সদৃশ হবে এটি দূরাশা, অধিকতর সদৃশকে ‘সিমিলিমাম’ এবং আংশিক সদৃশকে ‘সিমিলার’ বিবেচনা করতে হবে। যেহেতু সিমিলিমাম এর অধিকতর উচ্চশক্তি প্রয়োগে জীবনী শক্তির উপর অবাঞ্চিত ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টির আশংকা থাকে এবং চির-রোগের ক্ষেত্রে ঔষধজনিত বৃদ্ধি অনুচিত সেহেতু স্যার হ্যানিম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত নিরাপদ নিম্নক্রম দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। তবে একিউট-এমার্জেন্সি রোগীর চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৬৭ নম্বর সূত্রে অনুমোদন থাকায় স্যার শ্যামল কুমার দাসের চিকিৎসা নীতি অনুসরণ করা হবে।

প্যাথজেনিক লক্ষণ সদৃশ নির্বাচিত সিমিলিমাম পপুলেশন মেডিসিন :

যদি যথাযথ নিয়ম মেনে ফিলোসোফিক্যাল লক্ষণ সদৃশ ঔষধ প্রয়োগ করার পর এবং আরোগ্যের বাধা সমূহ দূর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া স্বত্বেও রোগীর প্যাথজেনিক লক্ষণ সমূহ স্বল্পতম বা কাঙ্খীত সময়ের মধ্যে বিদূরীত না হয় তবে মেটেরিয়া মেডিকার সাহায্য নিয়ে সিমিলিমাম পপুলেশন মেডিসিন নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে। সেই ক্ষেত্রেও রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে মনোনীত ঔষধ সমূহকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এখানে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে যে, আমরা স্যার শ্যামল কুমার দাস উদ্ভাবিত রিয়েল হোমিওপ্যাথিকে বিকৃত করছি কি-না?

আমাদের জবাব হচ্ছে-

১. রিয়েল হোমিওপ্যাথির দর্শনগত দিক নিয়ে কোন সংশয় না থাকলেও স্বয়ং স্যার শ্যামল কুমার দাস প্রয়োগনীতিকে এখনও চুড়ান্ত ঘোষণা করেননি। বারংবার তিনি এটিকে পরিবর্তন করে চলেছেন!

২. রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে দাবী করা হচ্ছে এটি জেনেটিক বেইজড চিকিৎসা পদ্ধতি। মডার্ন সাইন্স এখনও খুব সামন্য্যই এর রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হয়েছে। হোমিওপ্যাথিতে এর উপর গবেষণা খুবই সীমিত এবং তা হাইপোথেসিস নির্ভর। আমরা কি নিশ্চিৎ করে সিদ্ধান্ত দিতে পারি ছয়টি ট্রু-ডিজিজের প্রতিনিধিত্বকারী হার্মফুল জিন ছাড়া আর কোন বিরূপ জিন আমাদের জিনোমে নেই?

৩. যদি অজ্ঞাত হার্মফুল জিন আমাদের জিনোমে বংশগতি থেকে প্রাপ্তি ঘটে তবে তার চিকিৎসা কিভাবে হবে?

৪. চিকিৎসা কর্মে একজন চিকিৎসকের দুই ধরণের যেকোন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে- হয় তিনি যথাযথভাবে বর্ণিত প্রয়োগনীতি অনুসরণ করেও প্যাথজেনিক লক্ষণ সমূহ দূর করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, নতুবা তিনি কোথাও না কোথাও ভুল করছেন! এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্যাথজেনিক লক্ষণভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অন্যায় হবে; না-কি অন্য কোন অসঙ্গত প্যাথির নিকট রোগীকে প্রেরণ করা অবমাননাকর হবে?

৫. স্যার হ্যানিম্যান আমাদেরকে গোয়ার্তুমি মনোভাব ত্যাগ করতে বলেছেন। একই সাথে অর্গাননের ২ নম্বর  সূত্রে স্বল্পতম সময়ে নির্দোষ উপায়ে স্থায়ী আরোগ্যের তাগিদ দিয়েছেন। ৭৭ নম্বর পাদটিকায় তিনি ঔষধের লক্ষণ এবং মায়াজমের লক্ষণ উভয় ভিত্তিক চিকিৎসাকেই বহাল রেখেছেন এবং ৪৯ ও ৫১ নম্বর সূত্রে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত প্রতিকারগুলি থেকে আরোগ্যের জন্য উপযুক্ত ঔষধ অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন, সুতরাং আমরা সে চেষ্টা কেন করব না?

৬. প্রচলিত মায়াজমেটিক প্রভাব, ব্যক্তির ধাতুগত বৈশিষ্ট্য, সার্বদৈহিক ও মানসিক লক্ষণ সমূহকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে যদি পপুলেশন মেডিসিন নির্বাচন করা হয় তবে তা ‘সিকনেসকে’ অবজ্ঞা করা হবে না বলে আমরা মনে করি।

৭. সর্বোপরি রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় স্যার শ্যামল কুমার দাস মনোনীত আটটি ঔষধে যথাযথভাবে চেষ্টা করেও যখন আর কোন উপায় পাওয়া যাবে না তখন অগত্যা পপুলেশন মেডিসিনে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। তবে টিউবারকুলিনাম ও ব্যসিলিনাম কে বাদ দেয়া আমরা সঠিক মনে করি না, কারণ ড্রসেরা সার্বজনীন প্রয়োগযোগ্য ঔষধ নয়। সুতরাং রিয়েল হোমিওপ্যাথির প্রধান বিবেচ্য ঔষধ সংখ্যা হবে দশটি।

বাধা দূরীকরণ ঔষধ নির্বাচন (Obstacles removal medicine) :

অর্গাননের ২০৬ সূত্রে বলা হয়েছে,  চির-রোগ চিকিৎসা আরম্ভ করার আগে বিশেষ সতর্কতার সাথে অনুসন্ধান করতে হবে যে, রোগীর কোন সময়ে কোন উপদংশের ক্ষত বা বাগী অথবা প্রমেহর আঁচিল যুক্ত যৌন রোগ ছিল কিনা, কারণ এক্ষেত্রে এসকল প্রাইমারী লক্ষণ অবলম্বন করেই চিকিৎসা পরিচালনা করতে হবে। বিরল হলেও একই সাথে সিফিলিস ও সাইকোসিসের প্রাইমারী লক্ষণ পাওয়া যেতে পারে। অবশ্য সাম্প্রতিককালে রোগ এককভাবে খুবই কম দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিফিলিসের সাথে সোরা মিলিত হয়ে জটিল আকার ধারণ করে। আবার এই দু’য়ের সাথে সাইকোসিসও মিলিত হতে পারে। সোরার অংশগ্রহণ ছাড়া কোন প্রকারেরই চির-রোগসমূহ উৎপন্ন হতে পারে না।

সূত্র ২০৭- চিকিৎসা শুরুর পূর্বে চিকিৎসকের জানা প্রয়োজন ইতিপূর্বে এই রোগ থেকে মুক্তি লাভের আশায় রোগী কি কি চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন; কেননা অ্যালোপ্যাথিক বিকৃতি-সৃষ্টিকারী ওষুধ বার বার প্রয়োগে রোগের কতটা অধোগতি হয়েছে জেনে চিকিৎসককে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। 

(রিয়েল হোমিওপ্যাথির ধারণা মতে এটি পোষ্ট ট্রমা সিন্ড্রোম)।

পাদটিকা ৩২- যদি দুইটি প্রাকৃতিক রোগ আলাদা আলাদাভাবে একই মানবদেহে অবস্থান করে তবে উদাহরণসরূপ- সোরা এবং সিফিলিসের একত্রে অবস্থানের ক্ষেত্রে সোরার উপযোগী বিশেষ ওষুধসহ উত্তম পারদ ঘটিত ওষুধের যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ক্রমিকভাবে যথার্থ মাত্রা ও শক্তিতে প্রয়োগ বা ব্যবহারে উভয় প্রাকৃতিক রোগ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা যায়। 

এখানে স্যার হ্যানিম্যান ব্যক্তির সিকনেসের জন্য দায়ী অপরাপর মায়াজম বা ট্রু-ডিজিজের প্রতিনিধিত্বকারী হার্মফুল জিন যা বংশগতি বা জেনেটিক্স থেকে জন্মের সময়ই অর্জিত হয়ে থাকে সেগুলি ইন-একটিভ করতে পর্যায়ক্রমে নিয়মিত নিরাময়কারী ঔষধ প্রয়োগের শুরুতে কিংবা মাঝে-মধ্যে বাধা দূরীকরণ ঔষধ যথার্থ মাত্রা ও শক্তিতে প্রয়োগ বা ব্যবহার করার নির্দেশণা দিয়েছেন। এভাবে প্রয়োগ করলে সকল প্রাকৃতিক রোগ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব হবে নতুবা সেগুলি বাধা হয়ে দাড়াবে! এক্ষেত্রে ২০৯ নম্বর সূত্রে প্রথমেই একটি এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে চিকিৎসা আরম্ভ করে ক্রমেই অগ্রসর হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্যার শ্যামল কুমার দাসের নীতি হচ্ছে, প্রতিটি ট্রু-ডিজিজকে একে একে তাদের প্রভাবের ক্রমধারা অনুযায়ী ছয়টি সাইকেলে সাজিয়ে প্রতিটি সাইকেলের ট্রু-ডিজিজকে যথেষ্ঠ রকমের ইন-একটিভ করতে বাধা সৃষ্টিকারী একই ঔষধ একাধারে বিভিন্ন পটেন্সিতে প্রয়োগের পর আর যখন উপকার পাওয়া যাবে না তখন পরবর্তি সাইকেলের প্রেসক্রিপশনের পরামর্শ দিয়েছেন এছাড়াও সাইকেল পরিবর্তনের পূর্বে প্রতিটি সাইকেলেই যখন নির্বাচিত ঔষধ কাজ করবে না তখন সোরিনাম দিয়ে বিভিন্ন পটেন্সি প্রয়োগ পূর্বক ক্যাটালাইজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যে চিকিৎসক রিয়েল হোমিওপ্যাথিকে যথার্থভাবে আয়ত্তাধীন করতে সক্ষম হন নাই তাঁদের জন্য সিক্স সাইকেল অনুসরণ করাই কর্তব্য; কেননা এতে বিলম্বে হলেও ধৈর্য সহ চিকিৎসা পরিচালনা করলে অনেকাংশেই সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়। তবে এভাবে চিকিৎসা পরিচলনার কারণে ২ নম্বর সূত্রের অভিপ্রায় “স্বত্বর ও নিরূপদ্রবে আরোগ্য সম্পাদন” নীতি অর্জিত হয়না বলে আমরা মনে করি; আরোগ্যে দীর্ঘসূত্রিতার প্রয়োজন হয় এবং রোগীদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। সেকারণে আমরা স্বয়ং স্যার হ্যানিম্যান সুস্পষ্টভাবে যে নির্দেশণা দিয়ে গেছেন সেটিকেই অনুসরণ করা যাথার্থ বিবেচনা করছি। স্যার কেন্ট সহ গুরুত্বপূর্ণ সকল হোমিওপ্যাথিক ঋষি বাধা দূরীকরণে এই নীতি অবলম্বন করে চিকিৎসা পরিচালনা করেছেন। আমাদের উপ মহাদেশে ডাঃ হাসান মির্জাও এই নীতি অনুসরণ করতেন এবং আরোগ্যে তার সুনাম অনেকের চেয়ে বেশি! পঞ্চাশ সহস্রতমিক ঔষধ ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শততমিক সিএম পটেন্সি ঔষধ প্রয়োগ করতেন এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আরোগ্যের সন্ধান লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। সিএম পটেন্সি ব্যবহারের জন্য তাঁদের অনেক বিড়ম্বনাও ছিল যা স্যার কেন্ট এর বিশেষ উদ্বৃতি থেকে উপলব্ধি করা যায়; এমন কি ডাঃ হাসান মির্জা তার এক লেখনিতে উল্লেখ করেছেন “চিকিৎসকেরা সফলতার কাহিনি শুনতে চায়, যদি আমার ব্যর্থতার কেসগুলি লিখতাম তবে আনেক মোটা পুস্তকের আকার নিত!” সেকারণে স্যার হ্যানিম্যান ঘোষিত পঞ্চাশ সহস্রতমিক ঔষধ ব্যবহারকে আমরা অধিকতর নিরাপদ মনে করি এবং এই ঔষধ প্রয়োগে আরও কম সময়ের মধ্যে আরোগ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ! যেহেতু বাধা দূরীকরণের জন্য নির্বাচিত ঔষধগুলি যথেষ্ঠ উচ্চ শক্তিতে এবং এক মাত্রা হিসাবে ঋষিগণ প্রয়োগ করেছেন; সেহেতু আমাদের পরামর্শ হচ্ছে এসকল ক্ষেত্রে ০/৬ শক্তি বেছে নিতে হবে, এটি যথেষ্ঠ উচ্চতর শক্তি হলেও ডাঃ বিজয় কুমার বসুর অভিজ্ঞতায় ডায়নামিক ও অর্গানিক প্যাথলজির জটিলতার ক্ষেত্রে নিরাপদ। তিনি পরবর্তিতে সেই মেডিসিনকে প্রয়োজনে উল্লফন তথা ০/৬, ০/৯, ০/১২, ০/১৫ ... শক্তিতে ঔষধ পয়োগে সুফল পেয়েছেন, স্যার শ্যামল কুমার দাস নিজেও উল্লফন শক্তিতে ঔষধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকেন; আমরাও শুধুমাত্র বাধা দূরীকরণের জন্য নির্বাচিত ঔষধ এই নীতিতে প্রয়োগ করব। স্যার শ্যামল কুমার দাস প্রয়োজনে ০/৬০ এর উর্দ্ধের ঔষধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু আমরা স্যার হ্যানিম্যানের “শক্তির একটি সীমা থাকা উচিত যা ৩০ পর্যন্ত নির্ধারিত”- এই নীতি অবলম্বন করব; যদি ০/৩০ শক্তি পর্যন্ত ব্যবহার করার পরও পর্যবেক্ষনে মনে হয় একই ঔষধে থাকতে হবে তবে ডাঃ হরিমোহন চৌধুরীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আবার নিম্নক্রম থেকে যাত্রা শুরু করব কেননা তিনি মন্তব্য করেছেন এভাবে প্রয়োগ করে অভাবনীয় কাজ পাওয়া যায়! আমার হোমিওপ্যাথির শিক্ষাগুরু ডাঃ জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তিনিও একমত- কোন একটি ঔষধের ০/৩০ পর্যন্ত অথবা তার পূর্বেই কোন শক্তিতে পৌঁছে যদি ঔষধের যথাযথ কার্যকারীতা না পাওয়া যায় তখন পুনরায় সেই ঔষধের ০/১ থেকে শুরু করলে যথেষ্ঠ উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।

যে ঔষধগুলি বাধা দূরীকরণে অবদান রাখবে-

প্রথমেই অর্গাননের পাদটিকা ৬৩ সম্পর্কে একটি ধারণা আমরা অনুধাবন করার চেষ্টা করি। এখানে বলা হয়েছে- তৃতীয় আর একটি পদ্ধতি হচ্ছে আইসোপ্যাথি, এই পদ্ধতিতে সংক্রামক রোগের যে উপাদান যে রোগ সৃষ্টি করে সেই উপাদান দ্বারা সেই রোগকে আরোগ্য করা হয়। এটিও সমবিধান। বর্তমানে টিকা হিসাবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে, যা প্রয়োগে অনেক ভয়াবহ রোগের বিকাশ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। রোগ উৎপদনকারী উপাদান শক্তিকৃত করে হোমিওপ্যাথিক নোসোড ওষুধ তৈরি করা হয়ে থাকে তবে এর ব্যবহারে ক্ষতির দিকটির গুরুত্ব বিবেচনায় রাখা উচিত।

স্যার হ্যানিম্যানের সরাসরি ছাত্র ডাঃ কন্সটেনটাইন হেরিং এবং তাঁর ছাত্র ডাঃ স্যামুয়েল সান এই পাদটিকাকে গুরুত্ব দিয়ে সংক্রামক রোগ জীবাণু থেকে নোসোড ঔষধ প্রস্তুত করতে অধিক উৎসাহী হয়েছিলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন সংক্রামক রোগ জীবাণু থেকে তৈরিকৃত ঔষধ উক্ত রোগের অরিজিন তথা সিমিলিমাম, যদিও সার্বদৈহিক লক্ষণ বিবেচনায় এগুলিকে আমরা সিমিলার হতে পারে বলে মনে করি। হোমিওপ্যাথিক স্বনামধন্য ঋষিগণ অনেকেই মায়াজমেটিক বাধা দূরীকরণে এসকল নোসোড ঔষধ ব্যবহার করেছেন। আমরাও বাধা দূরীকরণে নোসোড ঔষধ ব্যবহারকেই উৎসাহিত করছি, তবে তা সতর্কতার সাথে প্রয়োগ করতে হবে। 

একিউট ডিজিজ চিকিৎসা :

অর্গাননের সূত্র ১৫০ এ বলা হয়েছে- যদি কোন রোগী এক বা একাধিক লক্ষণে মাত্র কিছুদিন যাবৎ ভুগতে থাকে তবে এই পকৃতির রোগকে মূলত অচির রোগ (acute disease) বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় আহার-বিহারে সামান্য রদবদল করলেই এধরণের অসুস্থতা প্রায় দূরীভূত হয়ে যায়। 

যদি বিশেষ প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির স্বল্পক্রিয় ঔষধ প্রয়োগে এ সমস্যার সমাধান করা হয় তা অর্গানন সমর্থন করে।     

সূত্র ১৫৮- অচির রোগের ক্ষেত্রে এই সামান্য সদৃশ বৃদ্ধি (homoeopathic aggravation) আরোগ্যের নিশ্চিত নিদর্শন ও নিতান্ত সংগত ঘটনা।

এই তথ্য থেকে আমরা শুধুমাত্র একিউট ডিজিজ মোকাবেলায় শততমিকের সিএম পটেন্সি প্রয়োগকে সমর্থন করছি।

সাধারণ মানুষের একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, হোমিওপ্যাথিতে ছোট-খাটো সমস্যা (!) সমাধানে কিছুই করার নেই, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ব্যবস্থা; সে ধরণের সমস্যায় তারা প্যারসিটামল, হিস্টাসিন, ফ্লাজিল কিংবা গ্যাসের ক্যাপসুল ইত্যাদি অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ দোকান থেকে কিনে সেবন করে থাকেন এবং আপাতত উপশম পেয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। তারা যদি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের চেম্বারে এধরণের সমস্যায় “জাস্ট একটি ঔষধ” দিন বলে দাবী করে তবে তাকে নীতি কথা শুনিয়ে ফিরিয়ে না দিয়ে হোমিওপ্যাথির উপর গণমানুষের এই চিন্তার সংকট মোকাবেলায় “জাস্ট একটি ঔষধ” দিতে হবে। এর জন্য হোমিওপ্যাথিতে অসংখ্য স্বল্পক্রিয় ঔষধ রয়েছে যার সম্পর্কে চিকিৎসকের যথেষ্ট জ্ঞান থাকা উচিত। তবে সিকনেসের চিকিৎসা একই সাথে শুরু করতে একটি কৌশলের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে; যেমন- প্রথমেই চেম্বারে বসিয়ে এক ডোজ হাইড্রোফোবিনাম ০/৬ সেবন করিয়ে দিন তারপর নিয়মিত সেবনের জন্য নির্বাচিত স্বল্পক্রিয় ঔষধটি দিয়ে দিন। যদি আবার কখনও সেই মানুষটি আপনার চেম্বারে আসে তখন যে লক্ষণ নিয়ে এসেছে তাতে যে মায়াজমের প্রাধান্য রয়েছে তার এ্যান্টিডট মেডিসিন হিসাবে সিফিলিনাম বা মেডোরিনাম বা টিউবারকুলিনাম বা ব্যসিলিনাম বা সোরিনাম যেকোন একটি ঔষধের ০/৬ একটি ডোজ চেম্বারে বসিয়েই সেবন করান এবং তখনকার সদৃশ আর একটি স্বল্পক্রিয় ঔষধ নিয়মিত সেবনের জন্য প্রদান করুন অর্থাৎ রোগী বিরতি দিয়ে দিয়ে যতবার আসবেন ততবার একটি করে মায়াজমেটিক ঔষধের একটি করে ডোজ সেবন করিয়ে দিন। এভাবেও আমরা নৈতিকভাবে সিকনেসের চিকিৎসা ঠিক রেখে গণ-মানুষের আস্থা অর্জনে অবদান রাখতে পারি। কেউ কেউ অভিযোগ তুলতে পারেন, এটি তো মায়াজমেটিক চিকৎসার মতো হয়ে গেল; এই অভিযোগ যথার্থ, কেননা সঠিক নীতি মেনে মায়াজমেটিক চিকৎসাকেই রিয়েল হোমিওপ্যাথি বলা উচিত। আমরা কে কোন নামে সন্তুষ্ট থাকবো সেটি ভিন্ন কথা, কেননা স্যার হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথিকে বিভক্ত করেননি। মনে রাখবেন স্যার হ্যানিম্যানের পর যে ঋষি সিকনেসের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি জোর তাগিদ দিয়েছেন সেই স্যার কেন্টও প্রয়োজনে রেজাল্ট অব ডিজিজের চিকিৎসা করতে স্বল্পক্রিয় ঔষধ ব্যবহার করেছেন!   

জীবনাচারে আরোগ্যের বাধা সমূহ সম্পর্কিত অর্গাননের নির্দেশণা :

সূত্র ২০৮- রোগবৃদ্ধির কারণ, চিকিৎসায় সহায়ক বা প্রতিবন্ধকতা, ব্যক্তি প্রকৃতি ও মানসিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য রোগীর বয়স, আহার-বিহার, বৃত্তি, পারিবারিক মর্যাদা, সামাজিক সম্বন্ধ ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে। এই তথ্যসমূহ চিকিৎসা কিভাবে পরিচালিত হবে এবং কি ধরণের পরামর্শ ও মোটিভেশন প্রয়োজন হবে তা হৃদয়ঙ্গম করতে সহায়ক হয়।

পাদটিকা ১৪০- যে সকল ভুল জীবনাচার আরোগ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে- খাদ্য ও পানীয় : কফি, ঔষধগুণযুক্ত চা, গাছ-গাছড়া সংমিশ্রিত বিয়ার, মশল্লাযুক্ত চকলেট, সুবাসিত জল, অত্যধিক মশল্লাযুক্ত খাদ্য ও চাটনি, মশল্লাযুক্ত কেক ও বরফ, স্থুল ভেষজগুণসম্পন্ন শাক-সবজির ঝোল, সেলারী, পিঁয়াজ, পুরাতন পনীর, পচা মাংশ, শুকরের মাংশ ও চর্বি, পাতিহাঁস বা রাজহংসীর মাংশ, বাচ্চা গরুর মাংশ, টকদ্রব্য, অতিভোজন, অতিরিক্ত চিনি ও লবনের ব্যবহার, নির্জলা মদ ও অন্যান্য সফট ড্রিংকস; ব্যবহার্য উপাদান : রকমারী গন্ধদ্রব্য, কড়াগন্ধযুক্ত ফুল, ওষুধ মিশ্রিত টুথ পাউডার, এসেন্স ও সুগন্ধি থলি, চামড়ার ঠিক উপরে পশমের বস্ত্র পরিধান; আচরন : আবদ্ধ ঘরে অলস জীবন-যাপন, অধিক সময় ধরে নিষ্ক্রিয় ব্যায়াম যেমন- ঘোড়ায় চড়া, গাড়ি চালনা বা দোলনায় চড়া ইত্যাদি, দীর্ঘসময় ধরে স্তন্য দান করা, বিছানায় অর্ধশায়িত অবস্থায় দিবা নিদ্রা, অধিকক্ষণ রাত্রি জাগরণ, অপরিচ্ছন্নতা, শায়িত অবস্থায় বই পড়া, ক্রোধ, দুঃখ বা বিরক্তিকর বিষয়, খাওয়ার পরে মানসিক-শারীরিক অতিরিক্ত পরিশ্রম; দুঃষ্কর্ম : গর্ভনিরোধ, হস্তমৈথুন, লাম্পট্য, অসম্পূর্ণ বা প্রতিহত রতিক্রিয়া; অভাব : জলাভুমিতে বা স্যাঁতসেঁতে ঘরে বসবাস, দারিদ্রক্লিষ্ট জীবন-যাপন প্রভৃতি। বিনা-প্রয়োজনে রোগীর মোটামুটি সহ্য হয় এমন অনেক খাদ্য-পানীয় সম্পর্কে অহেতুক বাছবিচার করে অসুবিধা বাড়ানো অনুচিত বা সমর্থনযোগ্য নয়। বরং ২৬৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে সকল খাদ্য-পানীয় গ্রহণে রোগীরা প্রচন্ড আকাঙ্খা প্রকাশ করে সীমিত পরিমানে হলেও তা প্রদান করা কর্তব্য। 

পাদটিকা ১৪১- রোগীর আগ্রহের খাদ্য-পানীয় আরোগ্যে খুব একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। যেমন- প্রকৃত প্রদাহযুক্ত রোগের ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইট প্রয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন; এমতাবস্থায় বৃক্ষজাত অ্যাসিড সেবনে অ্যাকোনাইটের ক্রিয়া নষ্ট হয় কিন্তু এসকল রোগীরা সাধারণত কেবল বিশুদ্ধ জলপান করার অকাঙ্খা প্রকাশ করে থকে।

একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে অবশ্যই নসোলজিক্যাল তথা বিভিন্ন রোগ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকতে হবে, রোগের গতি-প্রকৃতি না জানা থাকলে খেই হারিয়ে ফেলবেন। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচনে এই জ্ঞান কাজে লাগেনা বটে, কিন্তু পরিনতি বুঝতে আবশ্যক। রোগে কতটা কিউর, কতটা রিকভারী অথবা কতটা রিলিফ দেয়া যাবে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে এ্যালাইড এই বিষয়টির মূল্য অনেক। যেমন- জং ধরা ধাতবে বা পেরেকে কেটে বা ছিড়ে গেলে বা ছিদ্র হলে টিটেনাস ইনেজকশন নেয়া প্রয়োজন; সাপ, কুকুর বা বিষাক্ত কোন প্রাণি কামড়ালে বা আচড় দিলে টিকা নিতে হবে; করোনা হলে ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হতে পারে; ডেঙ্গু হলে রক্তের প্লাটিলেট ভেঙে রোগীর মৃত্যু হতে পারে ইত্যাদি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রোগী কিংবা তাঁদের স্বজনদেরকে পরামর্শ দেয়া যাবে না। 

বিশেষ বিশেষ রোগে খাদ্য ব্যবন্থাপনায়ও সতর্ক থাকতে হয়। যেমন- লিভারের রোগীর চর্বি জাতীয়, তৈলাক্ত খাবার, যেকোন ড্রিংকস, প্যাকেটজাত ও জাংক ফুড একদম নিষিদ্ধ; কিডনি রোগীর সন্ধ্যার আগে ডিনার শেষ করা উচিত, সজনে, ঢেঁরশ, বরবটি, কচু, মিষ্টি আলু, পালং শাক, পুঁই শাক, ধনে পাতা, কলা, কামরাঙ্গা, আনার, লেবু, আমড়া, বড়োই, পাকা আম, কাঁঠাল, বিভিন্ন প্রকার ডাল, শুকনা ফল, বাদাম, কাজু বাদাম, খেজুর ও বিচি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে, প্রাণীজ আমিষ সীমিত পরিমানে খেতে দিতে হবে, তরল খাদ্য নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে; হার্টের রোগীর রেডমিট, কোল্ড ড্রিংকস, পাস্তা ও পাউরুটি, ফাস্ট ফুড ও মদ্যপান নিষিদ্ধ; বাতের বেদনায় ডিমের কুসুম, কর্ন অয়েল, দুগ্ধ জাতীয় খাবার, চিনিযুক্ত খাবার, রেডমিট একদম সীমিত করতে হবে যদি না খেয়ে চলে তবে সেটি উত্তম; ব্রেনের রোগীর মদপান, কোল্ড ড্রিংকস, ফাস্ট ফুড, মিষ্টি, সাদা পাউরুটি খাওয়া নিষেধ ইত্যাদি।   

এই আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে একজন মানুষের পূর্ণ স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব। আবার এমন কিছু খাবার আছে যা নির্বাচিত ঔষধের ক্রিয়া বিনষ্ট করতে পারে। সুতরাং চিকিৎসককে এসকল বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ রোগী এবং তাঁর স্বজনদেরকে প্রদান করতে হবে।

আবার নিয়মিত পুষ্টিমান অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ ব্যতীত পরিপূর্ণ সুস্থ থাকা অসম্ভব। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেহ গঠন, জৈবিক ঘাটতি পূরণ ও কোষীয় ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কিছু উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের চাহিদা রয়েছে। অসচেতনা, আধুনিক বিকৃত জীবনাচার এবং দারিদ্রতা হেতু আমাদের খাদ্য ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। যেহেতু যেসকল উপাদান খাদ্য মারফত আমাদের দেহ পেয়ে থাকে, যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণের অভাবে সেই উপাদানগুলির ঘাটতি দেহ কোষে সৃষ্টি হয় তবে সেই ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ডাঃ সুসলারের বায়োকেমিক প্রয়োগে বিকল্পভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় কি-না ভেবে দেখার পরামর্শ রইল।   

ঔষধ প্রয়োগ পরবর্তি পর্যবেক্ষণ ও সেকেন্ড প্রেসক্রিপশন সম্পর্কিত অর্গাননের নির্দেশণা :

সূত্র ৯০- রোগীর হাব-ভাব বা আচরন সম্বন্ধে চিকিৎসকের বিশেষ পর্যবেক্ষণ লিখে রাখতে হবে, সুস্থাবস্থায় এইগুলি কেমন থাকে তার তথ্যও লিখে রাখতে হবে।

চিকিৎসা শুরুর পূর্বে কেস টেকিংয়ের সময় এগুলি না লিখে রাখলে রোগী পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তি প্রেসক্রিপশন যথাযথ হবে না। সুতরাং ব্যস্ততা কিংবা অনাহুত কোন সমস্যা যা-ই থাকুক না কেন সম্পূর্ণ কেস টেকিং না করতে সক্ষম হলেও অন্তত এই বিষয়টি লিখে রাখতে অবজ্ঞা করা যাবে না।

সূত্র ২৫৩- সর্বপ্রকার রোগে, বিশেষতঃ সংকটজনক রোগসমূহের ক্ষেত্রে উপশম বা বৃদ্ধির সামান্য সুচনা সকলের নিকট বোধগম্য হয় না; কিন্তু অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে মানসিক অবস্থা ও রোগীর সামগ্রিক চালচলন হতে আমরা সর্বাপেক্ষা নিশ্চিত ও শিক্ষাপ্রদ তত্ত্ব পেয়ে থাকি। একটুখানি উন্নতি হলেই রোগী অধিকতর স্বস্তি বোধ করতে থাকেন ও রোগীর মানসিক শান্তি, স্বচ্ছন্দতা ও প্রফুল্লতা বাড়তে থাকে- এমনকি রোগীর প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় পুনরায় ফিরে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়। পক্ষান্তরে, সামান্য বৃদ্ধি আরম্ভ হলে রোগীর প্রকৃতিতে, মানসিক অবস্থায়, অথবা সর্বপ্রকার আচরণে, অঙ্গভঙ্গিতে, ভাবভঙ্গিতে ও কাজকর্মে- অপ্রতিভ, অসহায়, শোচনীয় অবস্থা মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করলে সহজেই প্রতীয়মান হয়; কিন্তু তা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। 

এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে প্রথম ও পরবর্তি প্রেসক্রিপশনের পর অবজাভেশণ কালে শুধুমাত্র রোগীর ফিলিংস-থট-একটিভিটিকে গুরুত্ব দিয়ে পরবর্তী প্রেসক্রিপশন ঠিক করতে হবে। একজন চিকিৎসককে সিক্সথ সেন্স অর্জন পূর্বক সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনুধাবন করতে হবে রোগী ও রোগের প্রকৃত অর্থে বৃদ্ধি না-কি উপশম হচ্ছে এবং প্রয়োগকৃত ঔষধ আদৌ কার্যক্ষমতা প্রকাশ করছে কি-না। সুনির্দিষ্ট ও সুনিপুণ পর্যবেক্ষণের সফলতার উপর আরোগ্যের সফলতা ও সময় নির্ধারিত হয়ে থাকে। সামগ্রীকভাবে অর্গাননের মর্মার্থ উপলব্ধি ও বাস্তব জ্ঞান রিয়েল হোমিওপ্যাথি চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় সিক্সথ সেন্স অর্জনে সহায়ক হয়, শুধুমাত্র শুনে-বুঝে নয়- এটি অর্জন করতে হলে প্রচুর অধ্যয়ন প্রয়োজন। কোন রোগের কি ঔষধ এটি জেনে রিয়েল হোমিওপ্যাথি চর্চা কখনই সম্ভব হবে না, নীতিসমূহ আত্মস্থ করা জরুরী।  

পাদটিকা ৮৩- শারীরিক-মানসিক অবস্থা বলতে বোঝায় রোগীর মল ও মূত্র ত্যাগের প্রকৃতি, দিন ও রাত্রে ঘুমের অবস্থা, মেজাজ-মনোভাব ও স্মৃতিশক্তি কেমন, খাদ্য ও পানীয়ে স্বাদ-বিস্বাদ ও রুচি-অরুচি, পানাহারের পর শরীরের অবস্থা, মাথা, অঙ্গ-প্রতঙ্গ বা উদর সম্বন্ধে তথ্য। 

রিয়েল হোমিওপ্যাথিতে নিরাময়কারী ঔষধ নির্বাচনের জন্য নয়, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তিতে বাধা দূরীকরণ ঔষধ প্রেসক্রিপশনের জন্য এই তথ্যগুলি অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আরোগ্য কতটুকু অগ্রগতি কিংবা অধোগতি হচ্ছে তা যেমন জানা যায়, তেমনই ব্যক্তির মধ্যে কোন ট্রু-ডিজিজ এই মুহুর্তে ওভার একটিভ হয়ে প্যাথজেনিক লক্ষণ উৎপন্ন করছে এবং সেই বাধা দূর করতে কোন ঔষধ এখন প্রয়োগ করতে হবে তার ধারণা পাওয়া যায়। 

সূত্র ২৪৬- চিকিৎসা করার সময় রোগী যখন প্রত্যক্ষভাবে উত্তরোত্তর আরোগ্যের পথে অগ্রসর হতে থাকেন এবং রোগ-লক্ষণ সমূহ সুস্পষ্টভাবে কমতে থাকে তখন ওষুধের পুনঃপ্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। কারণ, পূর্ব প্রদত্ত এক মাত্রা ওষুধের আরোগ্যকারী ক্রিয়া একিউট ডিজিজের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং ক্রনিক ডিজিজের ক্ষেত্রে ধীর গতিতে হলেও সম্পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ক্রিয়াকাল বিবেচনায় ওষুধ প্রয়োগ করলে স্বাভাবিকভাবেই তা ৪০, ৫০, ১০০ দিন পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু নবতর (পঞ্চাশ সহস্রতমিক) পদ্ধতিতে রোগীকে তাড়াতাড়ি আরোগ্যের জন্য এই সময়কে অর্ধেক, এক চতুর্থাংশ বা তা অপেক্ষাও কম করা সম্ভব যা চিকিৎসক এবং রোগী উভয়ের জন্য একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য সতর্কতার সাথে পাঁচটি দিক লক্ষ্য রাখতে হবে। যথা- ১. ওষুধ নির্বাচন যথাযথ হতে হবে; ২. ওষুধকে উচ্চ শক্তিতে তথা পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তিতে পরিণত করে পানিতে গুলিয়ে যথাযথ ক্ষুদ্র মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে; ৩. পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময় পর পর একই ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে; ৪. একই ওষুধ পুনঃ প্রয়োগের সময় প্রত্যেকটি মাত্রা পূর্বের মাত্রার শক্তি থেকে কিছুটা পরিবর্তিত শক্তির হতে হবে; এবং ৫. অপরিবর্তিত শক্তি ও দ্রুত পুনঃ পুনঃ ওষুধ প্রয়োগে সদৃশ ঔষধজ রোগ শক্তি দ্বারা জৈবনীতিতে বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জেগে উঠছে বা বিদ্রোহ করছে কি না তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

সূত্র ২৪৭- বিশেষ নির্দেশ হচ্ছে- ১. আরোগ্য ত্বরান্বিত করার আশায় অল্পক্ষণ পর পর ওষুধ প্রয়োগ করা একেবারেই চলবে না; ২. একই শক্তির ওষুধ অপরিবর্তিত অবস্থায় দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করা যাবে না কেননা অপরিবর্তিত শক্তির ওষুধের মাত্রা জৈব ধর্ম বিনা বাধায় গ্রহণ করে না। এই নির্দেশ অমান্য করলে ওষুধ জনিত রোগ বৃদ্ধি রোগীকে অধিকতর দুর্বল করে তোলে এবং আরোগ্যে নানাবিধ বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করে, আর যদি নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় তবে রোগীর মধ্যে প্রাকৃতিক রোগের অনুভ‚তি কমতে থাকে এবং আরোগ্য অধিকতর নিকটবর্তী হয়। 

ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের সিদ্ধন্ত নিতে একজন চিকিৎসককে এই নির্দেশণাগুলির মর্মার্থ যথাযথভাবে উপলব্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। আমরা নির্মম অভিজ্ঞতাগুলো থেকে যদি মূল্যায়ন করি তবে পরিলক্ষিত হবে, চিকিৎসা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রায়শঃ যে উন্নতি দেখা যায় একের পর এক ঔষধের পুনঃপ্রয়োগের ফলে আরোগ্য ত্বরান্বিত হবে কি বরং বিপরীত ঘটনা ঘটে!

এ ক্ষেত্রে দুইটি দিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে-

১. ক্রমাগত ও সুস্পষ্ট উন্নতি: অর্থাৎ সূত্র ২৫৩ ও পাদটিকা ৮৩ অনুযায়ী যদি চিকিৎসকের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আরোগ্যের অগ্রগতির ধারা ইতিবাচক ও সন্তোষজনকভাবে এগুচ্ছে তবে নির্বাচিত নিয়মিত ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।

২. বাধাগ্রস্ত ও অস্পষ্ট উন্নতি: অর্থাৎ সূত্র ২৫৩ ও পাদটিকা ৮৩ অনুযায়ী যদি চিকিৎসকের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আরোগ্যের অগ্রগতির ধারা নেতিবাচক ও অসন্তোষজনকভাবে এগুচ্ছে তবে সুনির্বাচিত নিয়মিত ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করতে হবে। এই সময়ে কোন বাধা দূরকিরণের জন্য অন্য কোন ঔষধের প্রয়োজন বিবেচিত হলে পর্যায়ক্রমে সেই ঔষধের একটি মাত্রা বা সিঙ্গেল ডোজ প্রয়োগ করতে হবে। নিয়মিত ঔষধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে পঞ্চম সংস্করণের নীতি অনুযায়ী ঔষধের ক্রিয়াকাল পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই, ষষ্ঠ সংস্করণের নীতি অনুযায়ী প্রস্ততকৃত ঔষধ যখনই প্রয়োজন হবে তখনই প্রয়োগ করতে হবে, তবে ঔষধের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বৃদ্ধির সময়কালকে এড়িয়ে চলতে হবে। একটি ডোজ থেকে পরবর্তি ডোজের সময় ব্যবধান কত ঘন্টা বা দিন হবে তা চিকিৎসকের সিক্সথ সেন্স দিয়ে নির্ধারিত হবে। সূত্র ২৪৭ অনুযায়ী একিউট রোগে দুই হতে ছয় ঘন্টা পরপর এবং অত্যন্ত সাংঘাতিক ক্ষেত্রে প্রতি ঘন্টায় বা আরও ঘন ঘন ঔষধ প্রয়োগ করা যাবে, অন্যদিকে ক্রনিক রোগে প্রতিদিন বা একদিন পরপর ঔষধ প্রয়োগ করা যাবে। সুনির্বাচিত ওষুধ প্রায় প্রতিদিন সেবন করার সময় চির-রোগের শেষের দিকে তথাকথিত হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি দেখা দিলে রোগের অবশিষ্ট লক্ষণরাজী কিছুটা আবার বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে হয়, তখন ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দীর্ঘদিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে এবং আরোগ্যোম্মুখ অবস্থায় (convalescence) আর কোন ওষুধের প্রয়োজন আছে কি না দেখার জন্য ওষুধ একেবারে বন্ধ রেখে প্লাসিবো প্রয়োগ করতে হবে।

তবে সামগ্রীক প্রক্রিয়ায় অপরিবর্তিত শক্তি ও দ্রুত পুনঃ পুনঃ ওষুধ প্রয়োগে সদৃশ ঔষধজ রোগ শক্তি দ্বারা জৈবনীতিতে বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জেগে উঠছে বা বিদ্রোহ করছে কি না তাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

সূত্র ১৩৩- কোন ওষুধের বিশেষ অনুভুতি প্রকাশিত হলে তা প্রুভার কর্তৃক বিভিন্ন অবস্থা অবলম্বনে বা পরিবেশের পরিবর্তন বা খাদ্য-পানাহারের পরিবর্তন বা দিবা-রাত্র ইত্যাদি বিবেচনায় ঐ লক্ষণটি হ্র্যাস-বৃদ্ধি বা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি জেনে নিতে হবে।

সূত্র ১৭১- যেসব রোগ সোরা হতে উপন্ন হয় সেরূপ অ-রতিজ (non-venereal) চির-রোগ আরোগ্যের ক্ষেত্রে পর পর কয়েকটি সোর-বিরোধী (antipsoric) ওষুধ তাদের ক্রিয়াকাল শেষ হওয়ার পর সর্বতোভাবে সদৃশ পরবর্তী ওষুধ নির্বাচন করে প্রয়োগ করতে হবে।

সূত্র ২১৪- হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী সকল রোগের চিকিৎসায় ওষুধ নির্বাচনে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে সুতরাং মানসিক রোগের জন্য আলাদা কোনো নির্দেশণা নাই। অন্যান্য রোগ যেভাবে আরোগ্য করতে হবে এক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসৃত হবে।

মাত্রা তত্ত্ব :

সূত্র ২৭২- (পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে) প্রস্তুতকৃত ওষুধের একটি গ্লোবিউল শুষ্ক অবস্থায় জিহ্বার উপর প্রয়োগ করলে অনুগ্র একিউট ডিজিজের ক্ষেত্রে তা হবে একটি ক্ষুদ্রতম মাত্রা। তবে এটি কেবল সামান্য কয়েকটি স্নায়ুকেই স্পর্শ করে। এই গ্লোবিউল যদি কিছু দৃগ্ধ-শর্করার সাথে পিষে, অধিক পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে এবং প্রতিবার সেবনের পূর্বে উত্তমররূপে আলোড়িত করলে ওষুধ পূর্বাপেক্ষা অনেকবেশি শক্তিশালী হয় এবং তা কয়েকদিন ধরে ব্যবহার করা যায়। এই ওষুধ যতই ক্ষুদ্র মাত্রা হোক না কেন তার প্রত্যেকটি মাত্রা অনেকগুলি স্নায়ুকে স্পর্শ করে।

সূত্র ২৭৭- ওষুধের মাত্রা যতবেশি ক্ষুদ্র হবে, যতবেশি সদৃশভাবে সুনির্বাচিত হবে ততবেশি হিতকর ও আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকর হবে। সেজন্য মাত্রাকে আরোগ্যের উপযোগী পর্যায়ে হ্রাস করা হলে অধিকতর হিতকর হয়। 

সূত্র ২৭৮- তবে সর্বাপেক্ষা উপযোগী মাত্রার ক্ষুদ্রত্বের পর্যায় কি এবং মাত্রার পরিমান কতটুকু হলে সর্বাপেক্ষা স্বচ্ছন্দ ও দ্রুত আরোগ্য হবে তা সাধারণভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়; প্রত্যেকটি রোগে নির্ভুল পরীক্ষা, রোগীর সংবেদনশীলতার সতর্ক পর্যবেক্ষণ এবং যথার্থ অভিজ্ঞতা থেকে চিকিৎসককে নিজ থেকে এই মাত্রার পরিমান ঠিক করে নিতে হবে। কিন্তু এই মাত্রার পরিমান অ্যালোপ্যাথিক চিন্তাধারা থেকে কোনভাবেই বৃহত্তর করা যাবে না বরং কতটুকু ক্ষুদ্রতম করা যায় সেটি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। 

এই অনুচ্ছেদ মাত্রা সংক্রান্ত গবেষণাকে উৎসাহিত করে এবং বিচক্ষণ চিকিৎসকের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে রোগী ও সার্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় মাত্রা ঠিক করে নেয়ার কিন্তু তা অবশ্যই সর্বাধিক ক্ষুদ্রতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। 

সূত্র ২৭৯- ওষুধের মাত্রা এতটা ক্ষুদ্র করা চলে না যা প্রাকৃতিক রোগ অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী হয়ে তাকে পরাভুত করতে অক্ষম হয়। 

শ্রদ্ধেয় ডাঃ নীলকমল বর্মণের মতে সুনির্বাচিত ঔষধ যতবার প্রয়োগের পর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ শুরু হয় ততবারে এক মাত্রা গন্য হয়। আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবহারিক উদাহরণ- ধরাযাক এক জন ব্যক্তিকে প্রস্তুতকৃত ঔষধ ৮/১০/১২ ঝাঁকি দিয়ে এক চা চামচ পরিমান সেবন করানোর পর ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রতিক্রিয়া বিচক্ষন চিকিৎকের পর্যবেক্ষণে উপলব্ধি বা দৃশ্যমান হল, অতএব এই এক চামচ পরিমানই এক মাত্রা বা সিঙ্গেল ডোজ। এই প্রতিক্রিয়া উপশম বা হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি উভয়ই হতে পারে। যদি হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি হয় তবে ৩০ মিনিটের মধ্যে এই বৃদ্ধিতে জীবন বিপন্ন কিংবা অসহ্য পর্যায়ের না হয় তবে তা নিউট্রিলাইজ করার জন্য নিম্ন শক্তি বা এন্টিডট প্রয়োগ করা যাবে না, এই অবস্থা আরোগ্যে সহায়ক হবে। এভাবে প্রথম বার এক চামচ ঔষধ প্রয়োগের পর একিউট ক্রনিক আনস্টাবল ক্ষেত্রে ১৫ মিনিট কিংবা তারও কম সময় এবং ক্রনিক স্টাবল ক্ষেত্র হলে ২৪ ঘন্টায় কোন প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলে দ্বিতীবার পুনরায় প্রস্তুতকৃত ঔষধ ৮/১০/১২ ঝাঁকি দিয়ে আর এক চা চামচ পরিমান সেবন করানোর পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে পর্যবেক্ষণের জন্য। যদি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে এই দুই চামচ মিলে হল এক মাত্রা। একই পদ্ধতিতে তৃতীয়বার এক চামচ প্রয়োগের পর যদি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে এই তিন চামচ মিলে হল এক মাত্রা। এর পরও যদি কোন প্রতিক্রিয়া দেখা না যায় তবে রোগীর কষ্টের মাত্রা বিবেচনায় ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও কোন প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলে বুঝতে হবে ঔষধটি সুনির্বাচিত হলেও শক্তি সুনির্বাচিত হয়নি ফলে সিক্সথ সেন্স সাপেক্ষে পরবর্তি উচ্চতর অথবা পূর্ববর্তি নিম্নতর শক্তিকৃত ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। একটি পটেন্সিতে কাজ পাওয়া যায়নি বলে সুনির্বাচিত কোন ঔষধ ত্যাগ করা যাবে না, শক্তির আগ-পাছ করেও যদি কাজ না পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে ঔষধ নির্বাচন ভুল হয়েছে, কেননা ঔষধ নির্বাচন সঠিক হলে কোন না কোন অনুকূল প্রতিক্রিয়া দেখা যাবেই।  

সূত্র ২৮০- নূতন কষ্টকর লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত যে ওষুধের যে মাত্রাটির দ্বারা উপকার পাওয়া যায় এবং যতদিন স্বাভাবিক উন্নতি অব্যাহত থাকে ততদিন সেই ওষুধের সেই মাত্রাকে ১০ বার ঝাঁকি দিয়ে শক্তির ক্রমোন্নতি ঘটিয়ে পুনঃপ্রয়োগ করতে হবে। যদি এমনটি চলতে চলতে পুরাতন একাধিক প্রাথমিক যন্ত্রণা দেখা দেয় তখন বুঝতে হবে ওষুধের হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি হয়েছে সুতরাং এমতাবস্তায় ওষুধের পুনঃপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।

সূত্র ২৪৮- ওষুধের প্রয়োগ কৌশল হচ্ছে- ১. শক্তিকে পরিবর্তিত করতে পানিতে একটি (কিংবা কদাচিত কয়েকটি, যা মূলত প্রয়োজন হয় না) গ্লোবিউল পরিমান ওষুধ মিশ্রিত শিশিকে ৮, ১০ বা ১২ বার ঝাঁকি দিতে হবে; ২. এর থেকে এক বা বর্ধিত প্রয়োজনে কয়েক চা-চামচ পরিমান মাত্রায় রোগীকে সেবন করাতে হবে; ৩. ক্রনিক রোগে প্রতিদিন বা একদিন পরপর, একিউট রোগে দুই হতে ছয় ঘন্টা পরপর এবং অত্যন্ত সাংঘাতিক ক্ষেত্রে প্রতি ঘন্টায় বা আরও ঘন ঘন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে, এভাবে ক্রনিক ডিজিজের ক্ষেত্রে মাসের পর মাস প্রত্যেক দিন ওষুধ সেবন করানো যেতে পারে ; ৪. ওষুধ মিশ্রিত শিশিটি যদি সাত বা পনের দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায় তবে ঐ একই ওষুধেরই উচ্চতর শক্তির গ্লোবিউল দিয়ে নতুন বতলে আবার পানির সাথে মিশ্রিত করে নিয়ে রোগীকে সেবন করতে দিতে হবে (স্যার হ্যানিম্যানের অভিজ্ঞতা থেকে প্রদত্ত এই বক্তব্যে প্রমানিত হয় পঞ্চাশ সহস্রতমিক একটি নির্দিষ্ট শক্তির ওষুধ পানিতে মিশ্রিত করে সজোরে ঝাঁকি দিয়ে পরিবর্তিত মাত্রায় অপরাপর নিয়ম মেনে সাত থেকে পনের বার পুনঃ প্রয়োগ করলে সমস্যা হবে না। কিন্তু সূত্র ২৮০ অনুযায়ী চিকিৎসককে সিক্সথ সেন্স দিয়ে রোগীর জন্য উপযোগী মাত্রা নির্ধারণ করে নিতে হবে, এটি ব্যক্তি ভেদে সকলের জন্য একই হবে এমনটি নয়); ৫. রোগীর ক্রমোন্নতি অব্যহত থাকলে এইভাবেই ওষুধের পুনঃ পুনঃ প্রয়োগ করতে হবে; (তবে সূত্র ২৪৬ ও ২৪৭ সহ এর ব্যাখ্যা যথাযথভাবে অনুসরণ পূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে) ৬. ওষুধ প্রয়োগ চলতে চলতে জীবনে কখনও দেখা যায় নাই এমন নতুন কোন লক্ষণ প্রকাশ পেলে আগের ওষুধটি বাদ দিয়ে পুনরায় অবশিষ্ট লক্ষণ সমষ্টি বিবেচনায় নতুন অধিকতর সদৃশ অন্য একটি ওষুধ পুর্বের একই নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে; ৭. সুনির্বাচিত ওষুধ প্রায় প্রতিদিন সেবন করার সময় চির-রোগের শেষের দিকে তথাকথিত হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি দেখা দিলে রোগের অবশিষ্ট লক্ষণরাজী কিছুটা আবার বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে হয়, তখন ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দীর্ঘদিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে এবং আরোগ্যোম্মুখ অবস্থায় (convalescence) আর কোন ওষুধের প্রয়োজন আছে কি না দেখার জন্য ওষুধ একেবারে বন্ধ রেখে প্লাসিবো প্রয়োগ করতে হবে। এভাবেই অবিকৃত স্বাস্থ্য ফিরে আসে। ৮. রোগীকে ওষুধ সেবন করানো সম্ভব না হলে ছোট এক ড্রাম শিশির মধ্যে জল মিশ্রিত সুরাসারে (dilute alcohol) নির্বাচিত ওষুধের একটিমাত্র গ্লোবিউল ঝাঁকি দিয়ে মিলিয়ে দুই-তিন বা চার দিন পর পর ঘ্রাণের দ্বারা প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবার ঘ্রাণ নিতে দেবার পূর্বে শিশিটিকে ৮-১০ বার সজোরে ঝাঁকি দিতে হবে।

ডাঃ হরিমোহন চৌধুরীর মতে অতি সংবেদনশীল রোগীর ক্ষেত্রে ৮ বার, সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে ১০ বার এবং যাদের সংবেদনশীলতা খুবই কম তাদের ক্ষেত্রে ১২ বার ঝাঁকি দিতে হবে।

পাদটিকা ১৩৪-  ৪০, ৩০, ২০, ১৫ বা ৮ টেবিল চামচ (প্রায় ৬০০, ৪৫০, ৩০০, ২২৫ বা ১০০ মিলি) পানিতে ওষুধের মিশ্রন প্রস্তুত করতে হবে এবং মিশ্রনটি অবিকৃত রাখার জন্য কতকটা বিশুদ্ধ সুরাসার দিতে হবে।

সূত্র ২৮৪- জিহ্বা, মুখ ও পাকাশয় অত্যন্ত সাধারণভাবে ওষুধ দ্বারা অভিভুত হয়। নাক এবং মুখ দিয়ে শ্বাস বা ঘ্রাণ নিয়েও ওষুধের ক্রিয়া গ্রহণ করা যায়। শরীরের ত্বকেও ওষুধের মিশ্রণ দ্বারা মর্দনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। অভ্যন্তরীণ প্রয়োগের পাশাপাশি এভাবে বাহ্যিক প্রয়োগও উপযোগী হয়।

যেসকল রোগীদের কাপিং করে ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁদের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হচ্ছে মিশ্রিত ঔষধ ফেলে দিতে বললে তাঁরা মনস্তাত্বিক জটিলতায় ভোগেন; এ সমস্যা সমাধানে এই নির্দশণাকে গুরুত্ব দিয়ে অবশিষ্ট মিশ্রিত ঔষধ দ্বারা হাত-মুখ ধৌত করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। অভিজ্ঞতায় প্রমানিত হয়েছে এতে প্রভূত উপকার হয় এবং আরোগ্য ত্বরান্বিত হয়।  

সূত্র ২৮৫- মানব দেহের পিঠ, বাহু, হাত-পায়ে ওষুধর মিশ্রণ দ্বারা মর্দন বা ম্যাসেজ করলে পুরাতন রোগসমূহ দ্রুততর আরোগ্যলাভে সহায়ক হয়; তবে এক্ষেত্রে ব্যাথা-প্রদাহ, উদ্ভেদ বা আক্ষেপযুক্ত শরীরের ত্বক স্থানকে অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।

সূত্র ২৯০- মর্দন বা ম্যসাজ : রোগ থেকে আরোগ্যলাভের পর দূর্বল, শীর্ণ রোগীদেরকে কোন সৎপ্রকৃতির ও বলিষ্ঠ লোকেদের দ্বারা হাত-পা-বুক-পিঠের মাংসপেশীগুলিকে পৃথকভাবে ও পরিমিত চাপ দিয়ে মর্দন করতে থাকলে প্রাণশক্তি জাগ্রত হয় এবং স্বাভাবিক শক্তি ফিরে পায়। তবে অসহিষ্ণু ব্যক্তিদেরকে ম্যাসাজ করা ঠিক নয়।

সূত্র ২৯১- বিভিন্ন তাপমাত্রার পানিতে স্নান বা গোছল : বিশুদ্ধ জলে স্নান করা উপশমদায়ক হয়। রোগীর বাস্তবতা অনুযায়ী ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা (ঈষদুষ্ণ) বিশিষ্ট পানিতে গোছল করা, কিংবা ১০ থেকে ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় শীতল-স্নান সদৃশমতে সহায়ক হয়। অবিলম্বে এবং কিছুক্ষণ পর বারবার অবগাহন স্নান করলে অবসন্ন তন্তুসমূহের সাময়িক চেতনা পুনরায় ফিরে আসে। এই উদ্দেশ্যে জলের মধ্যে ক্ষণকাল অবস্থান না করে কয়েক মিনিট অবস্থান করা এবং ক্রমে পানির তাপমাত্রা কমিয়ে আনা অবশ্যক হয়।

পাদটিকা ১৪০, সূত্র ২৯০ ও ২৯১ প্রমান করে হোমিওপ্যাথি শুধুমাত্র ঔষধ প্রয়োগেই আরোগ্যের বিধান নয়; এটি একটি সামগ্রীক জীবনাচার ও পরিচর্যার বিধানও বটে!

উপসংহার :

১. রিয়েল হোমিওপ্যাথি সূত্র ১ অনুযায়ী সিকনেস তথা অসুস্থতার চিকিৎসা করে। জন্মের সময় মানব দেহের জিনোমে প্রাপ্ত সকল ট্রু-ডিজিজের প্রতিনিধিত্বকারী হার্মফুল জিনের অবস্থানই অসুস্থতাকে নির্দেশ করে। ট্রু-ডিজিজগুলির কোনটি ইন-একটিভ থাকলে ফিলোসোফি প্রকাশ পায় না, একটিভ থাকলে স্বভাব-চরিত্রের বৈশিষ্ট অনুযায়ী ঐ ট্রু-ডিজিজের ফিলোসোফি উপলব্ধি করা যায়, আর যখন ওভার একটিভ হয় তখন প্যাথজেনিক লক্ষণ বা রেজাল্ট অব ডিজিজ প্রকাশ পায়। সকল হার্মফুল জিনের ইন-একটিভ এবং একটিভ স্টেটকেই সিকনেস বা অসুস্থ বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

২. স্যার হ্যানিম্যান থেকে স্যার শ্যামর কুমার দাস পর্যন্ত মোট ছয়টি ট্রু-ডিজিজের সন্ধান বা আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। সূত্র ২০৪ অনুযায়ী প্রতিনিয়ত প্রকৃতি ও পরিবেশে লালন-পালনের বাস্তবতায় কিংবা জীবনাচারে মানব দেহে প্রতিকূল এপিজেনেটিক পরিবর্তন অব্যাহত থাকা স্বাভাবিক বিষয়, যা সবই আবিষ্কৃত বা আমাদের গোচরীভুত হয়নি। সুতরাং উদ্ভাবিত ছয়টি ট্রু-ডিজিজের জন্য স্যার শ্যামল কুমার দাসের নির্বাচিত আটটি মেডিসিন এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হলেও মানব জাতীর সকল রোগ-বালাই নিরাময়ের জন্য যথেষ্ঠ সফলতার প্রমান উপস্থাপন সহ নিশ্চিত করে দাবী করা হয়নি যে সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট ক্লিনিক্যাল প্রুভিংয়ের প্রমান পত্র নেই! যেহেতু স্যার হ্যানিম্যান ৭৭ নম্বর পাদটিকায় ঔষধের লক্ষণ এবং মায়াজমের লক্ষণ উভয় ভিত্তিক চিকিৎসাকেই বহাল রেখেছেন এবং ৪৯ ও ৫১ নম্বর সূত্রে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত প্রতিকারগুলি থেকে আরোগ্যের জন্য উপযুক্ত ঔষধ অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন, সুতরাং আমরা সে চেষ্টা অব্যহত রাখব এবং এটিই বিজ্ঞানের ন্যায়সঙ্গত দাবী।

৩. সূত্র ৩ এ বর্ণিত নির্দেশণা অনুযায়ী একজন রিয়েল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসাবে সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন সমূহে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে-

ক) কি আরোগ্য করতে হবে: সূত্র ৯৫ অনুযায়ী রোগীর দীর্ঘদিনের স্বভাব চরিত্র থেকে তাঁর সিকনেসের প্রভাবিত দিক চিহ্নিত হয়, যাকে জীবন দর্শন বলা হয়ে থাকে; আমরা সেই জীবন দর্শনকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আরোগ্যের সূচনা করতে চাই।

খ) ঔধের আরোগ্যকারী শক্তি কি: সূত্র ৯৫ অনুযায়ী ফিলোসোফিক্যাল লক্ষণ সমষ্টি অনুযায়ী স্যার শ্যামল কুমার দাস মনোনীত প্রধান আটটি ঔষধের মধ্যে আরোগ্যকারী শক্তি নিহিত রয়েছে; যদি বিশেষ কোন রোগীর ক্ষেত্রে এই ঔষধগুলির মধ্যে আরোগ্য নিশ্চিত করা অসম্ভব হয় তবে ৪৯ ও ৫১ নম্বর সূত্রে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত প্রতিকারগুলি থেকে সার্বদৈহিক প্যাথজেনিক লক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে আরোগ্যের জন্য উপযুক্ত ঔষধ অনুসন্ধান করব। প্রকৃত প্রস্তাবে ফিলোসোফিক্যাল ও প্যাথজেনিক লক্ষণ সমষ্টি বিবেচনায় এসকল ঔষধ সমূহ অধিকতর সদৃশ হয়ে থাকে সুতরাং এগুলিকে সিমিলিমাম হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। 

যেহেতু সকল ব্যক্তির মধ্যে সকল ট্রু-ডিজিজ বিদ্যমান রয়েছে সেকারণে সেগুলি আরোগ্যে বাধা হয়ে দাড়ায়; এক্ষেত্রে প্রধান আবিষ্কৃত ট্রু-ডিজিজগুলিকে ইন-একটিভ করতে উপযোগী প্রধান আটটি ঔষধ অর্গাননের পাদটিকা ৩২ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত করব; এখানেও অসমর্থ হলে অন্যান্য গভীর ক্রিয়াশীল ধাতুদোষ নাশক ঔষধগুলির মধ্য থেকে সর্বাধিক উপযোগী ঔষধ নির্বাচন করব। বাধা দূরীকরণের ঔষধগুলি সাধারণত আংশিক সদৃশ তথা সিমিলার হয়ে থাকে। 

গ) মূলনীতি অনুযায়ী ঔষধের আরোগ্যকারী শক্তিকে কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে: সূত্র ২৪৬, ২৪৭ ও ২৪৮ অনুযায়ী নির্দেশণা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে। পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত ঔষধ নিরাময়কারী সিমিলিমাম হিসাবে নির্বাচিত হলে ডাঃ হরিমোহন চৌধুরীর পরামর্শ মতে নোসোডের ক্ষেত্রে ০/৩ শক্তি থেকে ধারাবহিকভাবে প্রয়োগ করব, আর যদি অন্য কিংডমের ঔষধ হয় তবে ০/১ শক্তি থেকে শুরু করব। উল্লেখ্য যে, গর্ভবতীগণের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের আশঙ্কা এড়াতে স্যার শ্যামল কুমার দাসের অভিমতকে গুরুত্ব দিয়ে ০/৬ শক্তি দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হবে।

বাধাদূরীকরণের ঔষধ সমূহ সিমিলার হওয়ায় সূত্র ২৭৬ অনুযায়ী সদৃশ বৃদ্ধির ঝুঁকি কম থাকে বিধায় সেগুলি ০/৬ শক্তি থেকে প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে সিঙ্গেল ডোজ আকারে প্রয়োগ করা হবে, ঔষধে কাজ পাওয়া গেলে একই শক্তির একই ঔষধ পরবর্তি প্রয়োজনে পরিবর্তিত মাত্রায় পুনঃপ্রয়োগ করা যাবে। ডাঃ বিজয় কুমার বসু এবং স্যার শ্যামল কুমার দাসের নীতি অনুযায়ী পরবর্তি শক্তি হিসাবে উল্লফন যেমন ০/৬, ০/৯, ০/১২, ০/১৫ হিসাবে অগ্রসর হতে হবে।

একিউট এমার্জেন্সি রোগী চিকিৎসায় স্যার শ্যামল কুমার দাস প্রবর্তিত নীতি অনুসরণ করা হবে, এই ক্ষেত্র ছাড়া চিকিৎসায় কখনই শততমিক পটেন্সি ব্যবহার করা হবে না।

সূত্র ২৭৮ অনুযায়ী ক্ষুদ্রত্বের মাত্রা নির্ধারণে চিকিৎসকের বাস্তব গবেষণাধর্মী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হবে।

বৃহত্তর মাত্রা প্রয়োগের ক্ষেত্রে “পাদটিকা ১৬৩- শুধুমাত্র বড় মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের একটি মাত্র ব্যতিক্রম রয়েছে; যথা- সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস এর প্রাইমারী সিম্পটমস যেমন- চুলকনা, উপদংশক্ষত এবং ডুমুরাকৃতির আঁচিলসমূহ যদি চামড়ার উপরিভাগে প্রকাশিত হয় তখন ওষুধের প্রথম শক্তি থেকে বড় মাত্রায় প্রস্তুত করে ঘন ঘন প্রয়োগ শুরু করতে হবে এবং ক্রমোন্নত উচ্চ শক্তিতে অগ্রসর হতে হবে”- এই নীত কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।

ঘ) আরোগ্যের বাধাগুলি কিভাবে দূর করা হবে: রোগজ বাধা দূর করার নীতি পূর্বভাগে আলোচিত হয়েছে। জীবনাচারে বসবাস, খাদ্যাভ্যাস ও বদাভ্যাস দূর করতে সূত্র ২০৮ ও পাদটিকা ১৪০ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে।

৪. অর্গাননের সূত্র ২ এর অভিপ্রায় অনুযায়ী নির্দোষ উপায়ে স্বত্বর ও স্থায়ীভাবে আরোগ্যের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু পাদটিকা ৬২, ৬৪ ও ৬৬ তে বর্ণিত নির্দেশণা অনুযায়ী মিশ্র এবং উপশমকারী ঔষধেই নিরাময়ের প্রচেষ্টা সর্বাত্মকভাবে বর্জন করতে হবে।

৫. অর্গাননের সূত্র ৯ অনুযায়ী প্রকৃত আরোগ্যের দুইটি শর্ত “প্যাথজেনিক লক্ষণ সমূহ দূর” এবং “যুক্তিসিদ্ধ মন” উভয়ই প্রতিষ্ঠিত না হলে সুস্থতা নিশ্চিত হয়েছে বলে গণ্য করা যাবে না।

৬. সুনির্দিষ্ট আধুনিক প্যাথলজি ভিত্তিক রোগ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকে সহজতর করতে বিশেষ গবেষণা করা এখন সময়ের দাবী।